মিয়ানমারের সেই ‘বৌদ্ধ বিন লাদেনে’র আত্মসমর্পণ !
দীর্ঘ ১৮ মাস পলাতক থাকার পর অবশেষে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন মিয়ানমারের ‘বৌদ্ধ বিন লাদেন’ খ্যাত কট্টরপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু আশিন উইরাথু। রাজধানী ইয়াঙ্গুনের আঞ্চলিক সরকারের ধর্মীয় মন্ত্রণালয়ের পরিচালক সেইন মউ তার আত্মসমর্পণের বিষয়টি এএফপি’কে নিশ্চিত করেছেন। দেশটির জাতীয় নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে তার এই পদক্ষেপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন।
বৌদ্ধদের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ জাগানোর জন্য টাইম ম্যাগাজিন আশিন উইরাথুকে ‘বৌদ্ধ বিন লাদেন’ নামে অভিহিত করে।
মসজিদকে তিনি বর্ণনা করেন ‘শত্রুর ঘাঁটি’ হিসেবে, তার কাছে মুসলিমরা হচ্ছে ‘পাগলা কুকুর’, মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ ‘তারা চুরি করে ও বর্মী মহিলাদের ধর্ষণ করে’ এবং ‘গণহারে জন্ম দিয়ে তারা খুব দ্রুত নিজেদের বিস্তার ঘটাচ্ছে।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, আশিন উইরাথু প্রথম আলোচনায় আসেন ২০০১ সালে যখন তিনি মুসলিমদের মালিকানাধীন ব্যবসা ও দোকানপাট বয়কট করার জন্যে প্রচারণা শুরু করেন। এরকম একটি প্রচারণা শুরু করার পর ২০০৩ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তার ২৫ বছরের সাজা হয়েছিল। কিন্তু তাকে পুরো সাজা খাটতে হয়নি। সাত বছর পর সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমায় তিনি ২০১০ সালে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। কিন্তু উইরাথুর জেল-জীবন তার মধ্যে কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি, বরং মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে তিনি তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য অব্যাহত রাখেন। তিনি তার বক্তব্য বিবৃতিতে বৌদ্ধদের শৌর্য বীর্যের কাহিনী তুলে ধরেন, তার সাথে মিশিয়ে দেন জাতীয়তাবাদের নেশাও। সাংবাদিকদের সঙ্গে যখন উইরাথু কথা বলেন তখন তিনি খুব শান্তভাবে তাদের প্রশ্নের জবাব দেন ঠিকই, কিন্তু তিনি যখন সভা সমাবেশে বা জনসভায় বক্তব্য রাখেন তখন তিনি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ হয়ে উঠেন। তার কথার প্রতিটি বাক্যে ছড়িয়ে থাকে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা। মিয়ানমারের বিদ্যমান মুসলিম-বিদ্বেষে তার এসব বক্তব্য আরো উস্কানি জোগাতে সাহায্য করে। মুসলিম পুরুষরা যাতে বৌদ্ধ নারীদের বিয়ে করতে না পারে সেজন্যে একটি আইন তৈরিতেও অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন উইরাথু।
গত বছর মে মাসে পুলিশ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। ১৮ মাস পর সোমবার অনলাইনে একটি ভিডিওতে তাকে মাস্ক পরা অবস্থায় ইয়াঙ্গুনের সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় তিনি বলেন, সরকার আমাকে এই পরিস্থিতির মধ্যে আসতে বাধ্য করেছে। এ সময় তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ অব ডেমোক্রেসিকে ‘শয়তান’ হিসেবে উল্লেখ করে মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের ক্ষমতা থেকে সরানোর আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, আমি পুলিশের কাছে যাবো এবং তারা যা চায় সেটাই করবো।
আশিনের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো ও রাষ্ট্রদ্রোহের যে অভিযোগ সেটা প্রমাণিত হলে তার ৩ বছরের জেল হতে পারে।