ভোট কারচুপির প্রসঙ্গে জটিল প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প !
প্রচলিত আইন ও করোনার কারণে ডাকযোগে ভোট প্রদানের বিশেষ রীতি প্রবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বিপুল সংখ্যক আমেরিকান আগাম ভোটে অংশ নেন। এবং ডাকযোগে ভোট প্রদানের রীতিকে প্রথম থেকেই প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং কারচুপির অস্ত্র হিসেবে অভিহিত করে আসছেন প্রেসিডেন্ট প্রাম্প।
ট্রাম্পের অভিযোগ অনুযায়ী ডেমোক্র্যাটরা যদি ভোট ডাকাতি, ভোট জালিয়াতি আর প্রতারণা করে থাকে তাহলে সিনেট ও কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা জিতলো কীভাবে-এ প্রশ্ন জনমণে।
সর্বশেষ ৩ নভেম্বর সশরীরে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের ফলাফল দ্রুততম সময়ে জেনে কিছুটা স্বস্তিবোধ করেন ট্রাম্প। কিন্তু বুধবার দুপুরের পর পোস্টাল ব্যালট তথা ডাকযোগে আসা ভোট গণনার তথ্য গণমাধ্যমে আসতে থাকায় বিচলিতবোধ করেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সশরীরে ভোটে ট্রাম্প অনেক বেশী ভোটে এগিয়ে থাকলেও পোস্টাল ব্যালটের হিসাব আসার পর ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে ডেমক্র্যাট যো বাইডেনের বিজয়ের সম্ভাবনা।বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়ার ব্যবধানও কমে যায়। আরিজোনায় আগে থেকেই এগিয়ে ছিলেন ডো বাইডেন, সেখানে অবশ্য ট্রাম্পের ভোট কিছুটা বেড়েছে। সারা আমেরিকার ফলাফল গণমাধ্যমে প্রচারের সময় ট্রাম্পের ইলেক্টরাল ভোট-২১৩ এবং বাইডেনের ২৫৩ প্রদর্শন করা হয় সিএনএন টিভিতে।
সিএনএন’র বিশ্লেষণ অনুযায়ী পেনসিলভেনিয়ার ২০ ইলেক্টরাল ভোট জিততে পারলেই বিজয়ের জন্যে ২৭০ ভোটের বেশী হবে বাইডেনের অর্থাৎ তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। সে ক্ষেত্রে জর্জিয়া, আরিজোনা, নেভাদায় জয়ী হবার কোন প্রয়োজনই থাকবে না বাইডেনের।
অপরদিকে, ট্রাম্পের বিজয়ে পেনসিলভেনিয়া এবং জর্জিয়ায় অবশ্যই জয়ী হতে হবে। এরপর তাকে জিততে হবে আরিজোনা, নর্থ ক্যারলিনা, নেভাদাতেও। ভোটের গতি-প্রকৃতিতে সেটি কখনোই সম্ভব নয় বলে নির্বাচন-বিশ্লেষকরা মতামত পোষণ করতে থাকার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌণে ৭টায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের ব্রিফিং রুমে এসে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
তিনি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন এবং ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার গৃহিত ভোটের ফলাফল ব্যতিত অন্যকিছুকে মানতে রাজি নন বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটসহ বোর্ড অব ইলেকশনের কর্মকর্তাদের আচরণের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন ন্যায় বিচারের জন্যে।
আমেরিকানদের মতামতের পরিপন্থি কোন কাজকে তিনি বরদাশত করবেন না বলেও উল্লেখ করেন। ব্রিফিংয়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনই সুযোগ দেননি তিনি। ব্রিফিংয়ে সাথে ছিলেন না ভাইস প্রেসিডেন্ট। এমনকি রিপাবলিকান পার্টির কোন কর্মকর্তাকেও দেখা যায়নি।
বাইডেনের পক্ষে ‘দক্ষিণ এশিয়ান জোট’র জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিক এ প্রসঙ্গে পুনরায় বললেন, ‘রিপাবলিকান পার্টিতে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী অনেকে রয়েছেন। তারা ভোটারের মতামতের বিপক্ষে কখনোই যাবেন না। এছাড়া, পোস্টাল ব্যালটের বিধান নতুন নয়। এবার শুধু সেই বিধির সম্প্রসারণ ঘটানো হয় করোনাভাইরাসের কারণে। এনিয়ে বিতর্কের ন্যূনতম অবকাশ থাকতে পারে না।’
আমেরিকা-বাংলাদেশ এলায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী এম এ সালাম ট্রাম্পের হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, পোস্টাল ব্যালটের বিধি যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই শত বছরের পুরনো একটি ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে তিনি আক্রমণ করে বলেছেন যে, এর মাধ্যমে জাল ঘটনার অবতারণা হচ্ছে। এধরনের কথা বলে তিনি প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং নির্বাচনী বিধির পরিপন্থি আচরণ করছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সালাম বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকৃত অর্থে রিপাবলিকান পার্টি থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি মার্কিন জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। ১৯৮০ সালে রিপাবলিকান স্টেট গভর্নর রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে হেরে যাবার পর প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাঁকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন যে, বিদ্যমান ভোট-ব্যবস্থাকে সম্মান করার মধ্যদিয়ে আমেরিকানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। চার বছর আগে আমি যে ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলাম, জিমি কার্টার সেভাবেই বিজয়ী হয়েছেন। সুতরাং আমিস তাকে স্যালুট জানাচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠক ও লেখক ড. পার্থ ব্যানার্জি এ প্রসঙ্গে প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্প যে ধরনের কথা বলেছেন এবং এখনও বলছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাতে লিপ্ত করার গভীর একটি ষড়যন্ত্র। আসলে ট্রাম্প কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। তিনি হচ্ছেন মানুষ নামের একটি কলংক। গত চার বছর যেভাবে মিথ্যাচার করেছেন, তার উপযুক্ত জবাব পাচ্ছেন ব্যালটে। এখন সময় হচ্ছে জনগণের দেয়া রায়ের পথ ধরে ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজ থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করার।