fbpx
হোম অন্যান্য পৃথিবীর একমাত্র ফুটন্ত পানির নদী কোথায় আছে জানেন কি ?
পৃথিবীর একমাত্র ফুটন্ত পানির নদী কোথায় আছে জানেন কি ?

পৃথিবীর একমাত্র ফুটন্ত পানির নদী কোথায় আছে জানেন কি ?

0

নদী, এই একটি শব্দ শুনলেই চোখের সামনে যা ভেসে ওঠে, তা হলো শান্ত-শীতল জলধারা, মৃদুমন্দ বাতাসে যাতে ঢেউও তৈরি হচ্ছে। নদীর পানিকে শীতল বলে চিন্তা করেই আমরা অভ্যস্ত। তবে কখনো কী শুনেছেন ফুটন্ত পানির নদীর কথা? এমন একটি নদী যার মাঝে জীবিত যে কোনো কিছুই সিদ্ধ হয়ে যাবে?

হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি পৃথিবীর একমাত্র ফুটন্ত পানির নদী অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রেইনফরেস্ট, আমাজনে। শানায়-তিম্পিশকা বা লা-বোম্বা যেই নামেই আপনি এই নদীকে চিনেন না কেন, পৃথিবীর ২য় দীর্ঘতম নদী আমাজনের এই শাখা নদীর তাপমাত্রা এতোই বেশি, যা এর মাঝে পড়া যে কোনো কিছুকে গলিয়ে বা মেরে ফেলতেও সক্ষম! আমাজন রেইনফরেস্টের পেরু অঞ্চলের সীমানাভুক্ত ৬.৪ কি.মি. দীর্ঘ এই নদীটি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন আন্দ্রেস রুজো।

আন্দ্রেস পেশায় একজন জিও-থার্মাল সায়েন্টিস্ট (ভূ-তাপমাত্ৰা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ)। ছেলেবেলায়, আন্দ্রেস তার পেরুভিয়ান দাদার কাছ থেকে এমন উত্তপ্ত নদীর গল্প শুনতেন এরপর বড় হয়ে তিনি যখন একজন জিও-ফিজিসিস্ট হয়েই গেলেন, তখন ঠিক করলেন তিনি যাচাই করে দেখবেন, ছেলেবেলায় শোনা গল্প কী আসলেও ঠিক? এই গরম পানির নদীটি পেরুভিয়ান আমাজনের মধ্যভাগে নিচু জঙ্গলে অবস্থিত। নদীটির স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১২০ থেকে ২০০ ফারেনহাইট এবং কিছু জায়গায় এর গভীরতা ১৬ ফিট পর্যন্তও গিয়েছে। নদীর পানি এতোটাই উত্তপ্ত, আপনি যদি নদী পাড়ের কাঁদামাটিতেও পা রাখেন, সেকেন্ডেরও কম সময়ে তা আপনার ত্বকে তৃতীয় মাত্রায় পুড়ে যাবার কারণ হতে পারে।

কিন্তু কেন নদীটি উত্তপ্ত? আশেপাশে থাকা কোনো আগ্নেয়গিরির কারণে নদীর পানি ফুটছে? বিজ্ঞানিরাও প্রথমে তেমনটাই ভেবেছিলেন। সাধারণত সক্রিয় আগ্নেয়গিরির আশেপাশের এলাকায় এমন উত্তপ্ত লেক দেখা যায়। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি, এই নদীটির সবচেয়ে নিকটবর্তী সক্রিয় আগ্নেয়গিরিও অবস্থিত এর থেকে ৪০০ মাইল দূরে। আমাজন জঙ্গলেও ভূগর্ভস্থ কোনো ম্যাগমার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা এই নদীর পানি রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, পানিতে উপস্থিত এই কেমিক্যাল ও এই উত্তাপের উৎস নয়। এই পানি সাধারণ বৃষ্টির পানির মতোই।

তাহলে কেন এই নদীর পানি উত্তপ্ত? বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বিজ্ঞানীদের প্রথম ধারণা ছিল- নদীর পানি কী সূর্যের তাপেই এমন উত্তপ্ত হয়? কিন্তু আরো বিশদ বিশ্লেষণে তারা দেখেছেন, সূর্য নয় বরং পৃথিবীর ভূ-তাপীয় শক্তি বা জিও-থার্মাল এনার্জি এর জন্য দায়ী। পৃথিবীকে যদি একটি মানবদেহের সঙ্গে তুলনা করি, সেক্ষেত্রে পৃথিবীর ফল্ট লাইন, টেকটোনিক প্লেটের ফাটলকে বিবেচনা করা যায় ধমনী হিসেবে। এই ধমনী বা ফাটল গুলো সাধারণত পূর্ণ গরম পানি দিয়েই।

আর যখন এই উত্তপ্ত পানির ধারা পৃথিবী পৃষ্ঠ জুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে, তখন আমরা তাকে দেখতে পাই প্রাকৃতিক বিস্ময় রূপে, যেমন এই ফুটন্ত নদী। একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই ফুটন্ত পানির মাঝেও আন্দ্রেস ও তার সহযোগী বায়োলজিস্টরা খুঁজে পেয়েছেন কিছু নতুন ক্ষুদ্র প্রজাতি, যারা এই চরম তাপমাত্রায়ও বেঁচে থাকতে সক্ষম।

অন্যান্য অনেক সরিসৃপ ও উভচর প্রাণির মৃতদেহ প্রায়ই এই নদীতে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। এই প্রাণিগুলো ফুটন্ত পানিতে পড়ে যাওয়ায় আর সাঁতার কাটতে পারেনা, ফলে উত্তপ্ত পানি মুখ দিয়ে দেহে প্রবেশ করে ও প্রাণিটি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ভেতরে বাহিরে সিদ্ধ হতে থাকে। কিন্তু এরপরেও মানুষ এ নদীতে সাঁতার কাটে; বিশেষত আমাজনে বসবাসরত আদিবাসীরা। তবে সবসময় নয়, যখন ভারী বৃষ্টির পর বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে নদীর পানির তাপমাত্রা কমে যায়, তখন। এমনিতে তারা এই পানি খাওয়া, রান্না ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে। স্থানীয় আদিবাসীদের মাঝে এই নদী নিয়ে নানা রকম কুসংস্কার প্রচলিত আছে।

এছাড়াও নদীটির আশেপাশে বেশ কিছু তেল ও গ্যাস ফিল্ড রয়েছে, যার কারণে বিজ্ঞানীরা এই নদী ও তার জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন। তাদের মতে, পৃথিবীর এই একমাত্র ফুটন্ত পানির নদীকে যথাযথ সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

আন্দ্রেস রুজো এরই মধ্যে এই নদী ও তার ইকোসিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে “বয়েলিং রিভার প্রজেক্ট” হাতে নেবার পরিকল্পনা করেছেন। এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় আদিবাসী ও তেল- গ্যাস কোম্পানিগুলোর নির্বিচারে গাছ কাটা, বনভূমি পোড়ানো ইত্যাদি থামিয়ে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা ও এই অঞ্চলের তাৎপর্য তুলে ধরা। এই পৃথিবী একটি বিস্ময়কর স্থান, যার আরো অনেক প্রাচুর্য রয়ে গিয়েছে আমাদের চোখের আড়ালেই! এজন্যই বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক মার্ক টোয়েন বলেছেন- আজ থেকে ২০ বছর পর আপনি এই ভেবে হতাশ হবেন যে,আপনার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিল তা করতে পারেননি। তাই নিরাপদ আবাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ুন। আবিষ্কারের জন্য যাত্রা করুন, স্বপ্ন দেখুন আর শেষমেশ আবিষ্কার করুন।

 

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, সাইন্স এলার্ট, ফোর্বস, উইকিপিডিয়া

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *