fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা পুলিশ নির্যাতন করে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে’
পুলিশ নির্যাতন করে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে’

পুলিশ নির্যাতন করে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে’

0

ঘুষ না দেওয়ায় মাদকের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ ফারুকের স্ত্রীর সোর্স ও জোর করে অন্য যুবককে সাক্ষী বানানো হয় অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি পুলিশের
ঘুষ না দেওয়ায় মো. ফারুক হোসেন নামে এক বাউন্সারকে (দেহরক্ষী) মাদকের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর বংশাল থানাধীন কায়েতটুলী পুলিশ ফাঁড়ির কতিপয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন ফারুক। গত ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার দিকে কারাগার থেকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন ফারুক।
নিহতের স্ত্রী ঈমা আক্তার হ্যাপির অভিযোগ, গত ১২ জানুয়ারি রাতে সন্দেহভাজন হিসেবে রাস্তা থেকে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায় কায়েতটুলী ফাঁড়ির পুলিশ। স্বামীকে ছাড়াতে সেই রাতে ২ বছরের ছেলে ফারদিনকে নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে যান তিনি। শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে পুলিশের পা ধরে আকুতি জানালেও মন গলেনি পুলিশের। ফারুককে ছাড়াতে ঈমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন পুলিশের কয়েকজন। ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ফাঁড়িতেই বর্বর নির্যাতন চালানো হয় ফারুকের ওপর। এরপর গাঁজা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে মিথ্যা সাক্ষীদের দিয়ে ফারুককে মাদকের মামলায় জড়িয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পুলিশি নির্যাতনের ফলে অসুস্থ হয়ে কারাগারেই মৃত্যু হয় ফারুকের।
তবে নিহতের স্ত্রীর এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে দাবি করছেন কায়েতটুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ইমদাদুল হক। ফারুকের বিরুদ্ধে করা মাদক মামলার বাদী এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ফারুকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে এসআই ইমদাদুল হক উল্লেখ করেন, এক মাদক ব্যবসায়ী নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্য বিক্রি করছে- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১২ জানুয়ারি রাত ১১টা ২০ মিনিটে বংশাল থানাধীন নাজিমউদ্দিন রোডস্থ হাসিনা মঞ্জিলের সামনে অভিযান চালায় কায়েতটুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইমদাদুল হক ছাড়াও এএসআই মাসুদ রানা ও এএসআই বুলবুল আহমেদ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে ওই মাদক ব্যবসায়ী (ফারুক)। একপর্যায়ে সঙ্গীয় অফিসারদের সহায়তায় ওই আসামিকে আটক করেন ইমদাদুল হক। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষী মো. সুজন ও মো. সাগরসহ পুলিশ সদস্যদের সামনে ফারুক হোসেনের হাতে থাকা শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা মূল্যের আড়াইশ গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়। রাত পৌনে ১টার দিকে জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য বিক্রি করে আসছিলেন ফারুক।
কিন্তু এজাহারে উল্লিখিত দুই সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলে মিলেছে ভিন্ন তথ্য। গতকাল বুধবার সাক্ষী মো. সুজন আমাদের সময়কে বলেন, আমি বংশাল থানার এসআই আমিরুল স্যারের সোর্স হিসেবে কাজ করি। গত ১২ জানুয়ারি রাত ১১টা ২০ মিনিটে নাজিমউদ্দিন রোডস্থ হাসিনা মঞ্জিলের সামনে নয়, আমিরুল স্যারের সঙ্গেই ডিউটিতে ছিলাম। ফারুক নামে কাউকে গাঁজাসহ আটক করছে কিনা বলতে পারব না। গভীর রাতে ইমদাদুল হক স্যার মামলায় সাক্ষী হতে আমাকে কাগজে সই করতে বলেছিলেন। ঘটনার কিছুই জানি না, তাই সই করতে চাইছিলাম না। কিন্তু স্যারের পীড়াপীড়িতে সই করেছি। এর বেশি কিছু আমি জানি না।
এজাহারে উল্লিখিত আরেক সাক্ষী মো. সাগর বলেন, আমি নিমতলীর নবাবকাটরা এলাকায় থাকি। বোনের জন্মদিনের সাজসরঞ্জাম নিয়ে ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে চকবাজার থেকে বাসায় ফিরছিলাম। হাসিনা মঞ্জিলের সামনে পুলিশ আমাকে আটকায়। অনেকক্ষণ তল্লাশি করেও তারা আমার কাছে অবৈধ কিছু পায়নি। কিন্তু এরপরও আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখে। বাসায় বোন অপেক্ষা করছে, তাদের এ কথা জানালেও ছাড়া পাইনি। একপর্যায়ে পুলিশ বলে, কিছু ফর্মালিটিজ আছে। এরপর তারা আমার নাম-ঠিকানা, বাবার নাম, মায়ের নাম লিখে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়। কোনো মামলায় আমাকে সাক্ষী করা হচ্ছে, এটা জানলে আমি কোথাও সই করতাম না। প্রতারণা করে পুলিশ আমাকে আদালতে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে ফেলে দিল। এইটা কোন বিচার? উল্টো প্রশ্ন করেন তিনি।
নিহত ফারুকের স্ত্রী ঈমা আক্তার গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘চকবাজার থানাধীন খাজে দেওয়ান রোডের নিজ বাসায় তিন শিশুসন্তানকে নিয়ে ভালোই ছিলাম আমরা। আমার স্বামী সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের বাউন্সার হিসেবে কাজ করতেন। গত ১২ জানুয়ারি রাতে বাসা থেকে বের হন ফারুক। এর ১৫ মিনিট পরই তিনি ফোন করে আমাকে বলেন, পুলিশ খামোকা আমাকে রাস্তা থেকে ধরেছে। কায়েতটুলী পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি আসো। তড়িঘড়ি করে ফাঁড়িতে যাওয়ার পর ফারুক বলে, পুলিশ তাকে বেধড়ক পিটিয়েছে। স্বামীকে ছাড়াতে পুলিশের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি, কিন্তু কাজ হয়নি। এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘গাঁজা পাইছি, ফারুককে ছাড়াতে হলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে।’ আমি পুলিশকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতেও চাইছিলাম; কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। মিথ্যা মামলা দিয়ে পরদিন সকালে তাকে আদালতে তোলা হয়। ফারুক কোনো মাদক গ্রহণ করতেন না। তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত কোনো মামলাও নেই। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় পুলিশ মামলায় বলেছে, ও নাকি মাদকের ব্যবসা করত। ১৫ জানুয়ারি ঢামেক মর্গের ডোমের মাধ্যমে ফারুকের মৃত্যুর খবর পাই। সেখানে গিয়ে তার গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। পুলিশি নির্যাতনে অসুস্থ হয়েই ফারুকের মৃত্যু হয়েছে। টাকা না দেওয়ায় ফারুককে মাদক ব্যবসায়ী বানানোর পর খুনই করে ফেলল পুলিশ।
নিহত ফারুকের ঘরে বসেই কথা হচ্ছিল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ঈমা বলেন, স্বামী মাদক ব্যবসায়ী, এই অপবাদ মাথায় নিয়ে এখন বাঁচতে হবে আমাদের। তিন সন্তানের ভবিষ্যতের কথা একবারও ভাবল না পুলিশ! আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই… বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঈমা। মায়ের সঙ্গে কাঁদছিল সদ্য পিতৃহারা শিশু আলিফ, আরিয়ান ও ফারদিনও। মা আর তিন সন্তানের কান্নায় এ সময় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ঈমার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মামলার বাদী এসআই মো. ইমদাদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ফারুক হোসেনকে মাদকসহ গ্রেপ্তারের পর আইনের যথাযথ নিয়ম মেনেই তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাকে ছেড়ে দিতে পুলিশ টাকা দাবি করেছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা অবান্তর। টাকা না দেওয়ায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে, এমন অভিযোগও ভিত্তিহীন। কারণ ফারুক হোসেনকে একটি থাপ্পড়ও দেওয়া হয়নি। নির্যাতিত বা আহত কোনো আসামিকে কারা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে না। ফারুকের সঙ্গে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে তাকেও কারা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করত না। তারপরও নিহতের স্ত্রী কেন পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন তা বোধগম্য নয়।

 

 

সূত্র ,আমাদের সময়

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *