পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বাড়ছে ক্ষোভ আর অস্থিরতা
ভারত-শাসিত কাশ্মীর পরিস্থিতি বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একের পর এক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যেই পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দানা বেঁধে উঠছে ক্ষোভ আর বাড়ছে অস্থিরতা। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন ইমরান খান। কারণ পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরিদের ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে তা ভারতের সঙ্গে সংঘাতের পর্যায়ে চলে যেতে পারে। পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কিছু মানুষ এরই মধ্যে দাবি করেছে, হাজার হাজার লোক সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) অতিক্রম করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নিরপেক্ষ সূত্রে এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
গত ৫ অগাস্ট ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়া, কাশ্মীর অঞ্চলে গণহারে ধরপাকড়, যোগাযোগ বন্ধ করে রাখা এবং কারফিউ জারি করে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা নেওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। কাশ্মীর ইস্যু বিশ্বের সামনে তুলে ধরা এবং এই ইস্যুতে কিছু করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাগাদা দেওয়ার চেষ্টা করছেন ইমরান খান। কিন্তু পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মানুষ যেন আর ধৈর্য রাখতে পারছে না। আজাদ কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে কোটলি জেলার রাজনৈতিক দল জামায়াত-ই-ইসলামির প্রেসিডেন্ট হাবীবুর রহমান আফাকির কথাতেই সেই আভাস পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, আমরা সবাই জাতিসংঘ অধিবেশনের জন্য অপেক্ষা করে আছি… দেখতে চাই, বিশ্ব আমাদের সাহায্য করে কি না। না করলে আমরা এলওসি (লাইন অব কন্ট্রোল) ভাঙার চেষ্টা নেব।
এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারত সরকারের জম্মু-কাশ্মীর সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে এই পদক্ষেপের জেরে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কসহ অন্যান্য যোগাযোগ ছিন্ন করলেও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরিদের নিয়ন্ত্রণরেখা ভাঙার পরিকল্পনার নিন্দা করেছেন। এ মাসে এক ভাষণে তিনি বলেছেন, কেউ সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করলে সে ভারতের রোষে পড়বে, আন্তর্জাতিক সহমর্মিতাও হারাবে এবং কাশ্মীরেরও শত্রুতে পরিণত হবে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীও বলেছে, তারা কাউকে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোতে দেবে না। কাশ্মীরিদের কষ্টকর অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করার জন্য পাকিস্তান সর্বোতভাবে শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক চেষ্টাই চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা।
এদিকে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ দ্রুত প্রত্যাহার চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ওয়াশিংটনের এই মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক কর্মকর্তা অ্যালিস ওয়েলস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া আর আটককৃতদের মুক্তি দেখতে চাই।
গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপির নেতৃত্বাধীন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এই পদক্ষেপ ঘিরে কাশ্মীর জুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। আটক করা হয়েছে সেখানকার রাজনীতিককে। সংবাদমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কাশ্মীরে ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পালটা ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বহিষ্কারের পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কও স্থগিত করেছে পাকিস্তান।