fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা চোরদের গুরু’ তিনি, মোটরসাইকেলের তালা ভাঙেন ‘১ মিনিটে
চোরদের গুরু’ তিনি, মোটরসাইকেলের তালা ভাঙেন ‘১ মিনিটে

চোরদের গুরু’ তিনি, মোটরসাইকেলের তালা ভাঙেন ‘১ মিনিটে

0

একসময় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন আবুল কালাম আজাদ। এখন তিনি মোটরসাইকেল চোরদের ‘গুরু’। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তালিকায় তিনি ‘দুর্ধর্ষ’ চোর। তাঁর কাছ থেকে মোটরসাইকেল চুরির কৌশল শিখে অন্তত ১০ ‘শিষ্য’ এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় আলাদা চোর চক্র গড়ে তুলেছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, আবুল কালাম আজাদ ১৩ বছরে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৫৩টি মোটরসাইকেল চুরির মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৪৫ বার। তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর এক মাসের মধ্যে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও মোটরসাইকেল চুরি শুরু করেন। সর্বশেষ গত ৫ অক্টোবর তিনি জামিনে মুক্ত হন। এরপর ওয়ারী অঞ্চলে অন্তত ৮টি মোটরসাইকেল চুরি করেন। গত মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী এলাকায় চার সহযোগীসহ তিনি ডিবির হাতে আবারও গ্রেপ্তার হন।ডিবির ওয়ারী অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ারী অঞ্চলের কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আবুল কালামের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁকেসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
‘দুর্ধর্ষ’ চোর হলেন যেভাবে
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন আবুল কালাম আজাদ। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর। ঢাকায় এসে শুরুর দিকে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছেন। পরে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেছেন। একসময় রিকশা চালানো শুরু করেন। ২০১০ সালে তাঁর রিকশাটি চুরি হয়। সেই রিকশা তিনি খুঁজেও পান। তবে চোর চক্র রিকশাটি ফিরিয়ে দিতে চার হাজার টাকা দাবি করে। সেই টাকা তিনি দিতে পারেননি।
আবুল কালাম ডিবির কাছে দাবি করেন, চোর চক্রের সদস্যরা আবুল কালামকে তাঁদের দলে যোগ দিতে বলেন। পরিশ্রম ছাড়াই বেশি অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখান তাঁরা। তারপর তিনি রিকশা চুরি শুরু করেন। প্রথম রিকশা চুরির পর এক হাজার টাকা পেয়েছিলেন।
দুই বছর পর রিকশা চুরি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। কারাগারে গিয়ে খালেক নামে এক মোটরসাইকেল চোরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। খালেকের পরামর্শে তিনি মোটরসাইকেল চুরিতে উদ্বুদ্ধ হন। কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেকের সঙ্গে থেকে মোটরসাইকেল চুরির কৌশল শেখেন। প্রথম মোটরসাইকেল চুরির পর তিনি চার হাজার টাকা পেয়েছিলেন। ধীরে ধীরে মোটরসাইকেল চুরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন আবুল কালাম আজাদ।
ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, আবুল কালাম আন্তজেলা চোরচক্রের হোতাদের একজন। তাঁর নেতৃত্বে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর চোর চক্র সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ওয়ারী এলাকায় ৮ টি মোটরসাইকেল চুরির বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
নিজেকে ‘সেরা চোর’ দাবি
আবুল কালাম ডিবিকে জানান, তিনি কমপক্ষে ৪৫ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর তিনি এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে জামিনে মুক্ত হন। একবার জামিন পেতে তাঁর খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। তিনি গ্রেপ্তার হলে তাঁর স্ত্রী জামিনের ব্যবস্থা করেন।
আবুল কালাম সাধারণত বিভিন্ন বাসার গ্যারেজ থেকে মোটরসাইকেল চুরি করেন। তিনি নিজে মোটরসাইকেল চালাতে পারেন না। এ কারণে চুরির সময় নিজের সঙ্গে একজন মোটরসাইকেলচালক রাখেন। চুরির আগে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ‘রেকি’ করে নিরাপত্তাব্যবস্থা কম বা নিরাপত্তায় ফাঁক আছে এমন বাড়ি খুঁজে বের করেন। যখন বাড়ির গেটে কেউ থাকেন না, তখনই তিনি মোটরসাইকেলের তালা ভেঙে চুরি করেন।আবুল কালাম ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, একটি মোটরসাইকেলের তালা ভাঙতে তিনি সময় নেন মাত্র এক মিনিট। মোটরসাইকেলে ‘ঢালাই তালা’ লাগানো থাকলে সেটি তিনি ‘চোখের পলকে’ ভেঙে ফেলেন বলে দাবি করেন। তালা ভাঙার পর মোটরসাইকেলের একটি তাঁর কেটে সেটি দ্রুততম সময়ে চালু করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান।
আবুল কালাম আজাদ নিজেকে ‘সেরা চোর’ দাবি করে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, মোটরসাইকেল চুরিতে তাঁর মতো পারদর্শী আর কেউ নেই। তাঁর কাছ থেকে মোটরসাইকেল চুরি শিখে এখন অনেকে বড় চোর হয়েছেন। তাঁরা এখন আলাদা আলাদা চক্র গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চোর মাদারীপুরের শিবচরের জসীম উদ্দিন।
জসীমের স্ত্রীর বড় বোনের স্বামী (ভায়রা) শাহ আলমও তাঁর শিষ্য। মানিক, রাকিব, জহির, রহিম, ফায়জুল, মারুফ, রাসেল ও রাশেদ তাঁর কাছ থেকে চুরি শিখে এখন আলাদা আলাদা চক্র গড়ে তুলেছেন। এই ‘শিষ্যদের’ সঙ্গেও কারাগারেই পরিচয় হয়েছে আবুল কালাম আজাদের। চুরির পর মোটরসাইকেল তিনি নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও কুমিল্লা এলাকায় পাঠিয়ে দেন। একটি মোটরসাইকেল তিনি ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বিক্রি করেন।আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, তাঁর বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা থাকলেও এ নিয়ে তাঁর কোনো চিন্তা নেই। তবে দুটি মামলা নিয়ে তিনি ভয়ে আছেন। সেই দুটি হলো মাদকের মামলা। এই দুই মামলায় তাঁর সাজা হতে পারে। তবে চুরির মামলায় তাঁর কোনো সাজা হবে না বলে তিনি মনে করেন। এই ধারণার পক্ষে তাঁর যুক্তি, চুরির মামলার বিচার নিয়ে কারও আগ্রহ নেই। তাই চুরির মামলার বিচারও হয় না।
তবুও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি আবুল কালামের
আবুল কালাম ডিবির কাছে দাবি করেন, দুই শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেও তাঁর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মোটরসাইকেল চুরি করে উপার্জন করা অর্থের বড় একটি অংশ মামলার পেছনেই খরচ হয়েছে। বিভিন্ন সময় তাঁর অন্তত ১০ জন কথিত স্ত্রী ছিল। তাঁদের সঙ্গে বসবাসের সময় অনেক অর্থ খরচ হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তবে এখন আর এসব কথিত স্ত্রী নেই তাঁর।
আবুল কালাম জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁর প্রথম স্ত্রী ও তিন সন্তান নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন। বড় মেয়ের বিয়ে হলেও এখন স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। ছোট মেয়ে এবং আরেক ছেলে পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সন্তানেরা এখন তাঁর পরিচয় দিতে চান না। চুরি ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু মোটরসাইকেল চুরি তাঁর নেশায় পরিণত হয়েছে। কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে চুরি না করলে সহযোগীরাই পুলিশকে তথ্য দিয়ে তাঁকে ধরিয়ে দেন।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *