কেমন আছেন সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ?
মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর গত ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন । একে একে বেশকয়েকটি কেমোথেরাপি দেয়া হয় তাকে । কিন্তু আজও শারীরীক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
দিন দিন আরও দুর্বল হয়ে পড়ছেন এই সংগীতশিল্পী। মুলত, নন-হজকিন লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি। নির্ধারিত কেমোথেরাপিও দেয়া যাচ্ছে না তাকে। কেমো শেষ করে ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরার কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তার দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। এদিকে বাড়ছে চিকিৎসার ব্যয়।
প্রায় তিন মাস ধরে তার চিকিৎসা চলে। চিকিৎসার শুরুতে জানানো হয়েছিল, এন্ড্রু কিশোরকে ৬টি ধাপে ২৪টি কেমো দিতে হবে। ইতিমধ্যে ৪টি ধাপে তার ১৭টি কেমো সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চম ধাপে প্রথম কেমোথেরাপির প্রস্তুতি চলছিল। তবে তা শুরু করা যায়নি। এখনো ৭টি কেমো দেয়া বাকি।
বর্তমানে এ শিল্পী কেমো নেয়ার মতো শারীরিক শক্তি হারিয়েছেন বলে জানান চিকিৎসকরা । শিষ্য মোমিন বিশ্বাস বলেন, ‘আজ সকালেও কথা হয়েছে দাদার সঙ্গে। কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। দাদার শরীরে থেমে থেমে জ্বর আসছে। এরই মধ্যে কয়েক ব্যাগ রক্তও দিতে হয়েছে। শারীরিক নানা অসুবিধা দেখা দেওয়ায় বর্তমানে তার কেমোথেরাপি সাময়িক বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকেরা। শারীরিক সমস্যা কাটিয়ে উঠলে পুনরায় তার কেমোথেরাপি দেয়া হবে।’
ইতিমধ্যে চিকিৎসার সাহায্যার্থে তার স্ত্রীর অনুরোধ অনুযায়ী ‘গো ফান্ড মি’ নামের ওয়েবসাইটে খোলা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা বোর্ডের কাগজপত্র নিয়ে সিঙ্গাপুরপ্রবাসী বাংলাদেশিরা এই অনলাইন ফান্ডিংয়ের পেজ চালু করেছেন। এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন মোমিন বিশ্বাস। তিনি সরকারসহ দেশের চলচ্চিত্র, সংগীত, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের লোকজনকে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন। এর আগে চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে নিজের একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর । এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ অর্থ সহায়তা দেন ।
উল্লেখ্য, আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এন্ড্রু কিশোর ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু করেন। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে,‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’ ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্ ‘, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস।’