কাজীর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ গৃহবধূর !
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলাধীন বুড়িমারী স্থলবন্দর আলিম মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মাওলানা ইউনূছ আলী কাজীর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তিনি উপজেলার ঈমাম সমিতিরও সভাপতি।
গত ১৫ দিন আগে পাটগ্রাম পৌরসভার রহমানপুর এলাকায় কাজীর বাড়ীতে কাজীর দ্বিতীয় স্ত্রী’র মর্যাদা চাইতে গিয়ে বেদম মারপিট ও অমানসিক নির্যাতণের শিকার হন এক গৃহবধূ। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে আছেন কাজী ইউনূছ।
জেলা মুফাসসীর কমিটি’র সভাপতি ও কাজী হিসেবে পরিচিত পাটগ্রাম পৌরসভার ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউনূছ আলী’র কাজী অফিসটি পাটগ্রাম বাইপাস মোড়ে অবস্থিত।
জানা যায়, সেখানে গত ১৭/৬/২০ তারিখে নিজ স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন পাটগ্রাম বেংকান্দা গ্রামের জনৈক শাহীন। সংসার জীবনে স্ত্রী’র সাথে মিল নেই। অভাব অনটনে প্রায় ১৬ বছরের সংসার জীবনে তিনটি সন্তানের জন্ম হলেও স্বামী-স্ত্রী যেন দা-কুড়াল সম্পর্ক। অবশেষে স্বামীর তালাক নামা হাতে পেয়ে স্ত্রী যোগাযোগ করেন ওই কাজী অফিসে।
সংসারে স্বামীর নির্যাতণের মাত্রা যাই হোক, তিন সন্তানের দিকে তাকিয়ে হলেও সংসার করতে চান সেই গৃহবধূ। এ ব্যাপারে পরামর্শ নিতে কাজীর দেখা করেন। বিয়ের সময় দেনমোহর ৭৫ হাজার টাকার স্থলে ৩৫ হাজার টাকা দেনমোহর কেন লেখা হয়েছে তা কাজীর কাছে জানতে চাওয়া হলে কাজী তাকে শান্তনা দিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার জন্য নানা ধরণের প্ররোচনার মাধ্যমে মোবাইলে যোগাযোগ ও নিয়মিত একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ চালিয়ে যান।
এমনকি ওযু করে পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ আরবী কায়দা’ বইয়ের একটা ছেড়া পাতা ছুঁয়ে গৃহবধূ’র সামনে শপথ করে শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়ে গেছে বলে জানায় ওই কাজী। এরপর একদিন ঢাকা যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট করলে ঢাকা যেতে রাজি হননি ওই গৃহবধূ। পরে সন্তানদের ভালোবাসায় স্বামীর বাড়ীতে আবারও চলে যান ওই গৃহবধূ। সে সময় কাজী তার স্বামীকে নানা ধরণের কথা ফোনে শোনান যাতে করে তাকে আর মেনে না নেয় বলে জানান গৃহবধূ। এসময় কাজীর কথা শুনে তাকে অনেক মারপিট করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই স্বামী -স্ত্রীকে আবার একত্রিত করা হয়। সেখানে মীমাংসা করার বিষয়ে সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।
পাটগ্রাম হাসপাতালে থাকা ওই গৃহবধূ আরও জানান, তার স্বামী তাকে গত ৯ তারিখ লাঠি দিয়ে রক্তাক্ত করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। ৯ ও ১০ ফ্রেব্রয়ারি দুই দিন হাসপাতালে থাকার পর ১১ তারিখ রাতে কাজীর বাড়ীতে গিয়ে কাজীর দেখা করতে চান। এ সময় কাজীর লোকজনও তাকে বেদম মারপিট করেন। অবশেষে অমানসিক নির্যাতণের শিকার রক্তাক্ত অবস্থায় থাকা ওই নারী হাতে থাকা বিষ পানে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন।
পরে সে দিন রাতেই পাটগ্রাম থানা পুলিশের পিক আপ ভ্যানের সাহায্যে গৃহবধূকে উদ্ধার করে পাটগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে গৃহবধূ সুস্থ না হতেই জুডিশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে মীমাংসা করার জন্য দুই পক্ষ বিচারের দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন লিপু’র মাধ্যমে বিচারে তিন লাখ টাকা পান গৃহবধূ। তবে এই বিচার নিয়ে সচেতন মহলে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ভাইস চেয়ারম্যান লিপু’র ফোনে যোগাযোগ করলে সংযোগ মেলেনি। নির্যাতণের শিকার ওই গৃহবধূ পাটগ্রাম হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। ডাঃ কালী প্রসাদ রায় জানান, হাসপাতালের ১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূ বিষ পান করেছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুলিশের গাড়ীতে হাসপাতালে আনা হয়। স্বামী সন্তান কেউ দেখতে আসেনি। বিছানা থেকে দাঁড়াতে না পারায় অসুস্থতা বিবেচনা করে ক্যাথেটার লাগানো হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে ইউনূছ আলীর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, সুন্দরী ওই গৃহবধূ তো দূরের থাক, কোন নারীর সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই। জীবনে অনেক পরিশ্রমের বিনিময় তিনি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বলে সে সুবাদে ৫ তলা ফাউন্ডেশন একটি ফ্লাট বাসার তিন তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করেছেন। নানা কারণে অনেকে তার শত্রু হতে পারে দাবি করেন তিনি।
এদিকে কাজী হিসেবে ইউনূছ আলী পরিচিতি পেলেও তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের প্রতারণা, নারী কেলেঙ্কারি ও বাল্যবিবাহের মতো ঘৃণিত কাজের অভিযোগ রয়েছে বলে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে অপরাধের সত্যতা পাওয়া যায়।