fbpx
হোম আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ ও সংহতিতে কাশ্মীর
প্রতিবাদ ও সংহতিতে কাশ্মীর

প্রতিবাদ ও সংহতিতে কাশ্মীর

0

সোমবার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে ভারত। রাজ্য থেকে লাদাখকে বের করে তৈরি করা হচ্ছে নতুন  কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যার কোনো বিধানসভা থাকবে না।  দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পরিচালনা করবেন দুই লেফটেন্যান্ট গভর্নর। কাশ্মীরের টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগ রোববার সন্ধ্যায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং সেগুলো এখনও ঠিক করা হয়নি। কাশ্মীরের রাস্তায় হাজার হাজার সেনা টহল দিচ্ছে।

বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত দুই সপ্তাহে এই উপত্যকা অঞ্চলে হাজার হাজার ভারতীয় সেনা প্রবেশ করেছেন। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা। জায়গায় জায়গায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সরিয়ে নেয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এমন ঘোষণায় সেখানকার মানুষ কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। স্থানীয় নেতাদের এরই মধ্যে আটক ও গৃহবন্দী করা হয়েছে।

ভারতজুড়ে প্রতিবাদ

বিরোধী দল

৩৭০ ধারা বাতিলের প্রতিবাদ করেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। গতকাল বিকেলে সিপিএম ধর্মতলা থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলে যোগ দেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পলিটব্যুরো সদস্য সাবেক সাংসদ মহম্মদ সেলিম প্রমুখ। এদিন দিল্লিতেও বামফ্রন্ট প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, হান্নান মোল্লা, ডি রাজা প্রমুখ।

বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, ‘এই ঘটনা ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর ভয়ংকর আক্রমণ। এর কারণে দেশের ঐক্য ও নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়বে।’

কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করে মোদি সরকার নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলোর ক্ষমতা দখল করতে চাইছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘সাংবিধানিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের অখণ্ডতার ওপরে মোদি সরকার কি আঘাত হানতে চলেছে?’

কলকাতার সুশীল সমাজ: 

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতায় প্রতিবাদী বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বিভিন্ন প্রগতিশীল অঙ্গনের নেতারা এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের পর গতকাল সোমবার বিকেলে কলকাতা প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি। সমাবেশে বিক্ষোভও দেখানো হয়।

কলকাতা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য, ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ইমানুল হক, হকার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শক্তিমান ঘোষ প্রমুখ কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানান। বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে বিজেপি সরকার ভারতের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।

কাশ্মীরের রাজনীতিবিদ:

 ‘কাশ্মীরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ভারত’- জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। ফাইল ছবি

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, ‘কাশ্মীরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ভারত।’ জম্মু-কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা তুলে নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার তিনি এ কথা বলেন। বর্তমানে শ্রীনগরে গৃহবন্দী রয়েছেন মেহবুবা মুফতি। সেখানে বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারতের সংবিধানে যাঁদের বিশ্বাস ছিল, তাঁরা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন। ভারতের গণতন্ত্রে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’

এর আগে এক টুইট বার্তায় মেহবুবা মুফতি দাবি করেন, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সমগ্র উপমহাদেশে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়াকে তলব করে পাকিস্তান। এ সময় তার কাছে পাকিস্তানের কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ভারতের বেআইনি সিদ্ধান্তে আঞ্চলিক শান্তি নষ্ট হবে। ভারতের এমন সিদ্ধান্তে জাতিসংঘের নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইমরান বলেন, ‘ভারতের এই সিদ্ধান্তে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের আরও অবনতি হবে।’

ভারতের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি টুইট করে বলেছেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের প্রতি রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তান প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা সেই প্রতিজ্ঞায় অটল থাকার ব্যাপারটি নিশ্চিত করছি।’ জাতিসংঘ, ওআইসি, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বন্ধুরাষ্ট্রগুলো যেন এই ইস্যুতে নিশ্চুপ না থাকে, সেই বিষয়ে তাদের কাছে পাকিস্তান অনুরোধ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের এমন সিদ্ধান্তের ফলে কাশ্মীরে স্বাধীনতা আন্দোলন আরও বেগবান হবে, এমন মন্তব্যও করেছেন কোরেশি। তিনি বলেন, ‘আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমি বিশ্বাস করি, ভারতের এমন সিদ্ধান্তের ফলে কাশ্মীরে স্বাধীনতা আন্দোলন আরও গতিশীল হবে।’

পাকিস্তানের বিরোধী দল

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত সরকারকে উপযুক্ত জবাব দিতে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) সরকারকে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ দেবে বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)। সোমবার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু ও কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর পিএমএলএনের এমন সহযোগিতা প্রস্তাব করেছেন দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফ।

সোশ্যাল মিডিয়ায়  সংহতি

কাশ্মীরীদের জন্য এবং অখন্ড কাশ্মীরের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সংহতি ও প্রতিবাদ প্রকাশ করছেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সংহতি প্রকাশ করা হচ্ছে। অগনিত টুইটার ব্যবহারকরী প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে ‘হ্যাশট্যাগ রেড ফর কাশ্মীর’ (#RedForKashmir) ব্যবহার করছেন। এছাড়া #BleedForKashmir#StandWithKashmir , #KashmirUnderThreat প্রভৃতি হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করা হচ্ছে।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *