fbpx
হোম আন্তর্জাতিক ‘হাথরসের বীরাঙ্গনা’ খ্যাতি কুড়াচ্ছেন ভারতের দুই নারী সাংবাদিক
‘হাথরসের বীরাঙ্গনা’ খ্যাতি কুড়াচ্ছেন ভারতের দুই নারী সাংবাদিক

‘হাথরসের বীরাঙ্গনা’ খ্যাতি কুড়াচ্ছেন ভারতের দুই নারী সাংবাদিক

0

ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাথরস এখন উত্তাল। সেখানে এক দলিত তরুণীকে ধর্ষণ এবং তার মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা বরং পুলিশ আর প্রশাসনের ভয়-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নির্যাতিতার পরিবার। এই ঘটনার সূত্রধর ধরে সেখানে গিয়েছিলেন দুই নারী সাংবাদিক। এই দু’জন হলেন তনুশ্রী পান্ডে এবং প্রতিমা মিশ্র। তনুশ্রীর মতে, তিনি সত্যের প্রতি দায়বদ্ধ, নিরপেক্ষতার প্রতি নন। আর প্রতিমা মনে করেন, জীবনের আসল বিষাদময়তা হচ্ছে বেঁচে থাকতে থাকতে নিজেদের ভেতরের বোধগুলোকে মেরে ফেলা। অনেকেই বলছেন, এই দু’জন হচ্ছে হাথরসের দুই আসল বীরাঙ্গনা। দেশের আকাশে নতুন দুই তারকা।

হাথরসে ধর্ষণের পর ওই নারী প্রায় ১৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছেন। অবশেষে নির্যাতনের কষ্ট, প্রশাসনের অবহেলা, বঞ্চনা থেকে ওপারে পাড়ি দিয়েছেন। মারা যাওয়ার আগে তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করেছেন ওই নারী। ওই নারীর মৃত্যুর পর গভীর রাতে তার মরদেহ কাঠের অগোছাল চিতায় চড়িয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে যোগীর পুলিশ। ‘ইন্ডিয়া টুডে’র সাংবাদিক তনুশ্রী এবং তার ক্যামেরাপার্সন ওয়াকার আহমেদ সেই দৃশ্য দেখিয়েছিলেন পুরো দেশকে। দেখাতে দেখাতেই তনুশ্রী টুইট করেছিলেন, ‘অবিশ্বাস্য! আমার ঠিক পেছনেই হাথরস মামলার মৃতার মরদেহ পুড়ছে। পুলিশ তার পরিবারকে ঘরে আটক করে রেখেছে। আর সবার অগোচরে লাশ পোড়াচ্ছে।’

এর আগে তনুশ্রী প্রায় দেড় মিনিটের আরও একটি ভিডিও টুইট করে লিখেছিলেন, ‘নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। ইউপি পুলিশ নির্যাতিতার পরিবারকে বলছে, সময়ের সঙ্গে রীতি-রেওয়াজ বদলে যায়। আপনারা মেনে নিন, ভুল করেছেন। আর পরিবারটি বলছে, আপনারা কেন আমাদের মেয়েটাকে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি নিয়ে যেতে দিচ্ছেন না? কেন আমাদের উপর জোর খাটাচ্ছেন?’ এখন পর্যন্ত ওই ভিডিও দেখেছেন ৩৩ লাখ মানুষ। তারা দেখেছেন, হাথরসের নির্যাতিতার দেহ ‘দাহ’ করা হল না। হেলাফেলায় কাঠকুটোর মতো পুড়িয়ে দেওয়া হলো।

হাথরসের প্রত্যন্ত ওই গ্রামে গান্ধী পরিবারের নবীন প্রজন্মের দুই রাজনীতিক রাহুল-প্রিয়ঙ্কা যেখানে ঢুকতে না পেরে ফিরে এসেছেন, সেখানে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন ছোট্খাট, একহারা গড়নের এক তরুণী প্রতিমা মিশ্র। ব্যারিকেডের সামনে বসে পড়ছেন। পুলিশের মুখে হুট করেই মাইক ধরে বসছে আর ক্রমাগত প্রশ্ন করেই চলেছেন। করছেন তো করছেন, করেই যাচ্ছেন। তোতাপাখির মতো পুলিশ যখন বলছে, তাকে নির্যাতিতার গ্রামে ঢুকতে দেবে না, এবিপি নিউজের সাংবাদিক তখন গলা চড়িয়ে বলছেন, ‘অর্ডার কোথায়? গ্রামে ঢুকতে না দেওয়ার অর্ডার কোথায়? অর্ডার! অর্ডার! অর্ডার! অর্ডার! অর্ডার! অর্ডার! অর্ডার!’ দিশেহারা এবং ভ্যাবাচ্যাকা পুলিশ কর্মকর্তা ক্যামেরার তার ধরে টান মারছেন। তারপর মহিলা পুলিশকে ডাকছেন। তারা এসে পুঁচকে চেহারার প্রতিমাকে তুলে দিচ্ছেন পুলিশের গাড়িতে। গ্রামের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে পাকা রাস্তায় তোলার পরেও তিনি মাইক্রোফোন বাড়িয়ে দিচ্ছেন সামনের সিটে বসে থাকা মহিলা অফিসারের দিকে। বলছেন, ‘খুব পরিশ্রম হল। না? দেখুন, দেখুন। রুমাল বার করে ঘাম মুছছেন উনি এখন!’ তারপর সহযোগী ক্যামেরাপার্সন মনোজকে বললেন, ‘ক্যামেরা বন্ধ করবে না একদম!’ বলেই আবার অন্তহীন প্রশ্ন তার। যার কোনও জবাব আসছে না। কিন্তু তিনি থামছেন না। টানা আধঘণ্টার সেই টানাপড়েনের দৃশ্য এখনও পর্যন্ত দেখেছেন প্রায় ৫৪ লাখ মানুষ। যা দেখে চমৎকৃত প্রবীণ সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত। তার কথায়, ‘এগুলোই হচ্ছে সাংবাদিকতার নিশান। এই হামাগুড়ি দেওয়ার সময় দু’টি বাচ্চা মেয়ে যে সাহস আর দক্ষতা দেখাল, সেটা অভাবনীয়। ওদের দু’জনকেই স্যালুট।’ অশোক আরও বলছেন, ‘এরাই তো ইস্যুটা দিল রাজনীতিকদের। যেখানে রাহুলকে যেতে দিল না যোগীর পুলিশ, এরা সেখানে পৌঁছাল। শুধু পৌঁছাল না। খুঁড়ে বের করে আনল পুরো ঘটনা। ঢুকে পড়ার সাহস, বলায় আন্তরিকতা আর সাহসী ভঙ্গিতে ওদের এক চুলও নড়াতে পারেনি পুলিশ। উত্তরপ্রদেশ সরকার যে কিছুটা হলেও পিছু হটে সিবিআই তদন্তের সিদ্ধান্ত নিল, তাতে তো এদেরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা থেকে গেল।’

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
1

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *