চেঞ্জ টিভিতে এটিএম শামসুজ্জামানের শেষ সাক্ষাতকার…
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান মৃত্যুবরণ করেন। সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন প্রখ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাইস্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিল আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র।
তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে। তারপর জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। তার বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
বেশির ভাগ সময়ই তাকে দেখা যায় হাস্যরসের সংলাপে। ধীরে ধীরে তিনি কমেডি চরিত্রে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে গেলেন। সিনেমার পাশাপাশি টিভি নাটক ও টেলিফিল্মেও এটিএম শামসুজ্জামান নতুন করে সারাদেশের মানুষকে বিনোদিত করতে শুরু করেন। চলচ্চিত্র ‘টক জাল মিষ্টি’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘জামাই শ্বশুর’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’, নাটক ‘পত্র মিতালীসহ অনেক কাজ তার উদাহরণ হয়ে আছে।
১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দায়ী কে’ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান বরেণ্য এই অভিনেতা। শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। জলছবি, যাদুর বাঁশি, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, মন বসে না পড়ার টেবিলে চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়।
তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রটি। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন। এর আগে নারায়ণ ঘোষ মিতার লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ছাড়া খল চরিত্রে তার কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো- অশিক্ষিত, গোলাপী এখন ট্রেনে, পদ্মা মেঘনা যমুনা, স্বপ্নের নায়ক। এ ছাড়া বেশকিছু চলচ্চিত্রে তিনি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অনন্ত প্রেম, দোলনা, অচেনা, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, চোরাবালি।
অভিনয়-নির্মাতার পাশাপাশি একজন লেখক হিসেবেও এটিএম শামসুজ্জামানও নন্দিত। কাহিনিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান গল্প, কবিতা লেখারও চর্চা করেছেন নিভৃতে।
এ ছাড়া তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে-মলুয়া, বড় বউ, অবুঝ মন, ওরা ১১ জন, শ্লোগান, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, সংগ্রাম, ভুল যখন ভাঙ্গলো, চোখের জলে, লাঠিয়াল, অভাগী, নয়নমনি, যাদুর বাঁশি, গোলাপী এখন ট্রেনে, অশিক্ষিত, সূর্য দীঘল বাড়ী, ছুটির ঘণ্টা, লাল কাজল, পুরস্কার, প্রিন্সেস টিনা খান, রামের সুমতি, ঢাকা ৮৬, দায়ী কে?, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, দোলনা, পদ্মা মেঘনা যমুনা, অজান্তে, স্বপ্নের নায়ক, তোমার জন্য পাগল, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ, জামাই শ্বশুর, আধিয়ার, শাস্তি, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, আমার স্বপ্ন তুমি, দাদীমা, আয়না, ডাক্তার বাড়ী, চাঁদের মতো বউ, মন বসেনা পড়ার টেবিলে, এবাদাত, বিশ্বাসসহ অসংখ্য ছবি।