fbpx
হোম অন্যান্য কোরআনে বর্ণিত ‘হুদহুদ পাখি’ মাটির নিচেও দেখতে পায়
কোরআনে বর্ণিত ‘হুদহুদ পাখি’ মাটির নিচেও দেখতে পায়

কোরআনে বর্ণিত ‘হুদহুদ পাখি’ মাটির নিচেও দেখতে পায়

0

পৃথিবীতে বহু প্রজাতির পাখি রয়েছে। তার মধ্যে একটি পাখি হলো হুদহুদ বা কাঠকুড়ালি। এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম উপুপা এপপস। বাংলাদেশের একটি বিরল প্রজাতির পাখি এটি। তবে এশিয়া ও ইউরোপে এই পাখি প্রচুর দেখা যায়। এর অনেকগুলো উপপ্রজাতি রয়েছে। সেইন্ট হেলেনা প্রজাতিটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়েছে।

এর অন্যান্য নাম হুদহুদ, কাঠকুড়ালি ও মোহনচূড়া ইত্যাদি। এই পাখিটির নাম ‘মোহনচূড়া’ দিয়েছেন কথাসাহিত্যিক বনফুল। হুদহুদ পাখি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। এরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫ থেকে ৩২ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। সম্পূর্ণ পাখা মেলা অবস্থায় এদের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৪৪ থেকে ৪৮ সে.মি. পর্যন্ত। এদের ওজন ৬৫ গ্রামের চেয়ে কমবেশি হয়ে থাকে। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা একই ধরনের। শরীর বাদামি রঙের, পিঠ, ডানা ও লেজে জেব্রার মতো ডোরাকাটা সাদা-কালো দাগ আছে। মুখ, গলা ও বুক কমলা-পীতাভ বা লালচে-কমলা। এই পাখির মাথায় খুব সুন্দর একটা ঝুঁটি আছে। ঝুঁটির হলদে বাদামি পালকের মাথাটা কালো। উত্তেজিত হয়ে রেগে গেলে এবং প্রজনন মৌসুমে পাখিটির ঝুঁটি প্রসারিত করে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি ঝুঁটি ফুলের মতো মেলে ধরে সঙ্গীকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। তখন দূর থেকে মনে হয় মাথার ওপর ফুল ফুটে আছে। এর ঠোঁট দীঘল, কিছুটা বক্র এবং রং কালচে। অপেক্ষাকৃত লম্বা ও কাস্তের মতো কিছুটা বাঁকা। নরম মাটির মধ্যে ঠোঁট গুঁজে খাদ্য খুঁজে বেড়ায়। শুঁয়োপোকা, কেঁচো, ফড়িং, উঁইপোকা, ঝিঁঝি পোকাসহ বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় খায়। হুদহুদ নির্জন নদীর পাড়, আবাদি ও পতিত জমি, খোলা শুকনো মাঠ প্রভৃতি স্থানে একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। এদের গোসল করার পদ্ধতিও বেশ ভিন্ন। সাধারণত এরা পানিতেই গোসল সেরে নেয়। তবে নির্জন জমাটবদ্ধ পানির উৎস খুঁজে না পেলে জনহীন রাস্তার বালিই হয়ে ওঠে গোসলের জলাশয়। ধুলোবালি গায়ে ছড়িয়ে গোসলের কাজটি দ্রুতই সেরে নেয় তারা। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন ঋতু। একেকটি পাখি তখন পাঁচ থেকে সাতটি ডিম দেয়। ডিমগুলোর রং নীল। মেয়ে পাখির চেয়ে পুরুষ পাখি অধিক সময় ডিমে তা দেয়। ১৫ থেকে ১৭ দিন পর ডিম থেকে ছানা বের হয়। ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার পর পুরুষ এবং স্ত্রী উভয় পাখিই বাচ্চাদেরকে খাওয়ানো এবং লালন পালনে ব্যস্ত থাকে।

হুদহুদকে বলা যেতে পারে ইতিহাসের পাখি। এটি আকারে ছোট। সৌন্দর্যে অনন্য। হজরত সুলাইমান (আ.) এর রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হতো এই পাখি। হজরত সুলাইমান (আ.) পশুপাখিদের ভাষা বুঝতেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে এই অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী করেছিলেন। একজন নবী এবং একই সঙ্গে রাজার অনেক কাজই করত এই পাখিটি। অন্যান্য দেশগুলোতে কী হচ্ছে, কী চিন্তা ভাবনা চলছে, কোথায় কী ঘটছে, কোন রাজা কোথায় সৈন্য পাঠাচ্ছে, কেন পাঠাচ্ছে ইত্যাদি। এসবের জন্য হজরত সুলাইমান (আ.) হুদহুদ পাখি ব্যবহার করতেন।

“হজরত সুলাইমান (আ.) পক্ষীদের খোঁজ খবর নিলেন, অতঃপর বললেন, কী হলো, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত? আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা হত্যা করব অথবা সে উপস্থিত করবে উপযুক্ত কারণ। কিছুক্ষণ পড়েই হুদ এসে বলল, আপনি যা অবগত নন, আমি তা অবগত হয়েছি। আমি আপনার কাছে সাবা থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি। আমি এক নারীকে সাবাবাসীদের উপর রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসন আছে। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সেজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না।”

পবিত্র কোরআনের ২৭ নম্বর সূরা আন নমলের ২০ থেকে ৩১ নম্বর আয়াতে হজরত সুলায়মান (আ.) এর সংবাদ সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে হুদহুদ পাখির উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ‘হুদহুদ’ এক জাতীয় ছোট্ট পাখির নাম। যা পক্ষীকূলের মধ্যে অতীব ক্ষুদ্র ও দুর্বল। যার সংখ্যাও দুনিয়াতে খুবই কম। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) একদা নও মুসলিম ইহুদি পন্ডিত আব্দুল্লাহ বিন সালামকে জিজ্ঞাসা করেন, এত সব পাখি থাকতে বিশেষভাবে ‘হুদহুদ’ পাখির খোঁজ নেয়ার কারণ কী ছিল? জওয়াবে তিনি বলেন, সুলায়মান (আ.) তার বিশাল বাহিনীসহ ওইসময় এমন এক অঞ্চলে ছিলেন, যেখানে পানি ছিল না। আল্লাহ তায়ালা হুদহুদ পাখিকে এই বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যে, সে ভূগর্ভের বস্তুসমূহকে এবং ভূগর্ভে প্রবাহিত পানি উপর থেকেই দেখতে পায়। হযরত সুলায়মান (আ.) হুদহুদকে এজন্যেই বিশেষভাবে খোঁজ করছিলেন যে, এতদঞ্চলে কোথায় মরুগর্ভে পানি লুকায়িত আছে, সেটা জেনে নিয়ে সেখানে জিন দ্বারা খনন করে যাতে দ্রুত পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করা যায়।

একদা হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) ‘হুদহুদ’ পাখি সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন। তখন নাফে ইবনুল আযরক্ব তাকে বলেন, জেনে নিন হে মহাজ্ঞানী! হুদহুদ পাখি মাটির গভীরে দেখতে পায়। তবে তাকে ধরার জন্য মাটির উপরে বিস্তৃত জাল সে দেখতে পায় না। যখন সে তাতে পতিত হয়। জবাবে ইবনু আববাস (রা.) বলেন, যখন তকদীর এসে যায়, চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়।’ চমৎকার এ জবাবে মুগ্ধ হয়ে ইবনুল আরাবী বলেন, এরূপ জবাব দিতে কেউ সক্ষম হয় না, কোরআনের আলেম ব্যতীত।

হুদহুদ পাখি নিয়ে আরো কিছু তথ্য-

> মধ্য প্রাচ্যের দেশ ওমানের সুপারিশ ঘূর্ণিঝড়টির নাম রাখা হয়েছে হুদহুদ।

> এই পাখিটি অত্যন্ত সুন্দর, পরিচিত ও বেশ উপকারী। এমনকি আমাদের দেশেও এই পাখিটি অপরিচিত নয়।

> ওমানবাসীদের কাছেও এই পাখি মোহনচূড়া হিসেবে পরিচিত।

> আরব দুনিয়া এবং সংলগ্ন প্রতিটি দেশের মানুষ এই পাখিটিকে হুদহুদ নামে চেনে।

> কোনো কোনো দেশের জাতীয় পাখি হিসেবে এই হুদহুদ পাখি পরিচিত।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *