‘আশপাশে হাসপাতাল রেখে আবরারকে মহাখালী নিতে হলো কেন’?
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘কিশোর আলো’র বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলনে নেমেছে সহপাঠীরা। শনিবার (২ নভেম্বর) তারা চার দফা দাবি জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ১. ঘটনা চলাকালীন সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে হবে, ২. অনুষ্ঠানের মিস ম্যানেজমেন্টের দায় স্বীকার করে কিশোর আলো, ইভেন্ট অর্গানাইজার, আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত বক্তব্য দিতে হবে, ৩. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ছাত্রদের হাতে পৌঁছাতে হবে, ৪. শুধু দুর্ঘটনা নয়, তাদের গাফিলতি, মিসম্যানেজমেন্ট এবং উদাসীনতা উল্লেখ করে পত্রিকায় উল্লেখ করে বিবৃতি দিতে হবে।
৭২ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো আদায় না হলে পরবর্তীতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে ‘কিশোর আলো’র অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাজমুল আবরার রাহাত। তবে মৃত্যুর অনেকক্ষণ পরও ঘটনা চেপে রেখে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ায় আয়োজক ও কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অপরদিকে এ ঘটনাকে একটি দুর্ঘটনা আখ্যা দিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
নাঈমুল আবরারের মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একই কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ। তার প্রশ্ন, মৃত্যুর খবর চেপে রেখে কেন গান চললো, অনুষ্ঠান চললো?
ঘটনা চেপে রেখে আবরারকে কলেজের পাশের কোনো হাসপাতালে না নিয়ে শুধু চুক্তির কারণে মহাখালীর একটি হাসপাতালে নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন আরও অনেকেই।
এক শিক্ষার্থী বলেন, বিকেল সাড়ে তিনটার সময় সে আহত হয়েছে, ডাক্তাররা বলছে মারা গেছে। তখন কেনো ঘটনাটা জানানো হয়নি। অনুষ্ঠানস্থলের পাশেই ওর ডেডবডিটা ছিল। কেন অনুষ্ঠানটা চললো। এরপরেও কেন দুই ঘণ্টা ধরে গান চললো।
আবরারের এক সহপাঠী বলেন, এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলো অথচ আবরারকে মোহাম্মদপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হলো মহাখালীতে। এতদূর নিতে হলো কেন? তো কত হাসপাতাল ছিল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ছিল।
জানাজার পর এক শিক্ষার্থী বলেন, রাত ১২টার পর জানাজা দেয়া হলো। এটা কি কোনো কিছু ধামাচাপা দেয়ার জন্য হচ্ছে? তিনটার দিকে ঘটনাটা ঘটেছে। আমরা জানতে পেরেছি রাত ৯টার পরে। কিন্তু ‘কিশোর আলো’র পক্ষ থেকে আমাদের কিছুই জানানো হলো না।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিপরীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, মৃত্যুটি নিছক দুর্ঘটনা। একটি তদন্ত কমিটি করেই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ ছাড়াই নিয়েছেন দাফনের প্রস্তুতি।
কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর এখানে যে চিকিৎসকরা ছিলেন তারা তাকে দেখেন। কিন্তু তারা পালস পাচ্ছিলেন না। তাই দ্রুত তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতাল থেকে জানানো হয় সে আগেই মারা গেছে।
তিনি বলেন, আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ, কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশ এবং মৃতের বাবা-মা; আমরা সবাই একসঙ্গে বসেছিলাম।আমরা একটা বিষয়ে একমত হয়েছি, এর জন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে দায়ী না করে এটাকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়ে পোস্টমর্টেম ছাড়া লাশ নিয়ে এসেছি।
এর আগে রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় কয়েকশো মানুষের প্রাণহানির মাঝেও মেরিল প্রথম আলো তাদের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার শিকার হতে হয় আয়োজকদের।