ধনী পরিচয়ে বিয়ে অত:পর হত্যা !
ভালোবেসে বিয়ে করা স্ত্রীকে মেরেই ফেললেন ঝাড়ুদার স্বামী। পেশায় ঝাড়ুদার হলেও ফেসবুকে শীর্ষ ধনী পরিবারের সন্তান হিসেবেই পরিচয় দিতেন সাকিব। সে পরিচয়ে সম্পর্ক হয় এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে। ধীরে ধীরে সেই সম্পর্ক রূপ নেয় প্রেমে। করেছেন বিয়েও। এরপরই বেরিয়ে আসে স্বামীর আসল চেহারা। এ নিয়ে শুরু হয় ঝগড়া। সেই জেরে মেরে ফেলেন স্ত্রীকে।
নিহতের নাম নাজনীন আক্তার। তিনি বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রামের আবদুল লতিফের মেয়ে। নাজনীন জেলার গাবতলী উপজেলার সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।
নাজনীনের ভাই আবদুল আহাদ জানান, তার বোনের স্বামী সাকিব হোসেন একজন ঝাড়ুদার। কিন্তু তিনি পরিচয় গোপন করে ও শীর্ষ ধনী পরিবারের সন্তান দাবি করে তার বোনের সঙ্গে ফেসবুকে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর চলতি বছরের ২৪ মে বাবার অসুস্থতার কথা বলে নাজনীনকে নিয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের ভাড়া বাসায় যান সাকিব।
এরপর দুদিন বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তারা। এ ঘটনায় ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় জিডি করে নাজনীনের পরিবার। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাকিবকে আটক করে পুলিশ।
আটকের পর সাকিব জানান, বরিশালে এসে নাজনীন জানতে পারেন তার বাবা আবদুল করিম হাওলাদার পেশায় ভ্যানচালক। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। এ সময় তার কাছে এসব তথ্য গোপন করার কারণ জানতে চান নাজনীন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীন তাকে ‘ফকিন্নির ছ্যল’ (ভিক্ষুকের ছেলে) বলে গালি দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীনের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। পরে বগুড়ায় কর্মস্থলে যোগ দেন।
এদিকে, সাকিবের তথ্যমতে সোমবার বরিশালের বাবুগঞ্জের নতুন চরজাহাপুর গ্রামে সাকিবের বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। মঙ্গলবার পার্শ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার বাটাজোরের হরহর গ্রামে সাকিবের বাবা করিম হাওলাদারের ভাড়া বাড়িসহ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। ওইদিন বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি ওড়না ও একটি নখের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়। তবে নাজনীনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। লাশ না পেয়ে মঙ্গলবার সাকিবকে নিয়ে ফিরে যায় বগুড়া সদর থানার পুলিশ।
তৃতীয় দিনের অভিযানে বুধবার দুপুরে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউপি ভবন সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে বস্তাবন্দি একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের শরীরে থাকা পোশাক দেখে নাজনীন বলে শনাক্ত করেছে স্থানীয়রা।
গৌরনদী থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, নিহতের মা-বাবাকে বরিশালে আসতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।