ড. ইউনূসের ভাষণে ‘তথ্য ঘাটতি’ নিয়ে পিনাকীর পোস্ট
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংঘটিত যুগান্তকারী পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেছেন।
ড.ইউনূসের এই ভাষণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা, সমালোচনা ও পরামর্শ দিয়েছেন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুকে এক পোস্টে ড. ইউনূসের ভাষণে ‘তথ্য ঘাটতি’ আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ফিলিস্তিনিদের নিয়ে জাতিসংঘে ড. ইউনূসের বক্তব্য ‘মানুষের হৃদয়ের কথা’ : আহমাদুল্লাহফিলিস্তিনিদের নিয়ে জাতিসংঘে ড. ইউনূসের বক্তব্য ‘মানুষের হৃদয়ের কথা’ : আহমাদুল্লাহ
শুরুতেই অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের প্রশংসা করে তিনি লিখেছেন, ‘প্রফেসর ইউনূসেরর জাতিসংঘের ভাষণ ভালো হয়েছে। কিছু ওয়ান্ডারফুল এলিমেন্ট আছে।’
এরপরই তিনি ভাষণে ‘তথ্য ঘাটতি’র বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে লেখেন, ‘কিছু জিনিস তিনি যুক্ত করতে পারতেন, কিছু জিনিস বাদ দিতে পারতেন। আমার জানা মতে উনি স্পিচ রাইটারের সাহায্য নেন না। ওনার বক্তব্য উনি নিজেই লেখেন। অন্তত যে সময়কাল আমি উনার সঙ্গে কাজ করেছি। তাও নিচের এলিমেন্টগুলো তিনি বিবেচনা করলে স্পিচ আরও ভালো হবে।
জাতিসংঘ
গ্রেইট এলিমেন্টস
১। ফিলিস্তিন নিয়ে অবস্থান। গাজায় গণহত্যা বন্ধের আহ্বান।
২। অটোনোমাস এআই নিয়ে সাবধানবাণী।
৩। বাংলাদেশের লড়াইকে হাসিনার আমলকে রিপ্রেজেন্ট করা। হাসিনা কী কী ক্ষতি করেছে সেটা তালিকা ধরে বলা। এই প্রথম বিপ্লবে সোশ্যাল মিডিয়ার অবদানের কথা বললেন। এইজন্য কৃতজ্ঞতা।
যা যুক্ত করা যেত
১। বন্যার কারণ। আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যার কথা।
২। সীমান্ত হত্যার কথা।
৩। হাসিনাকে যে ইন্ডিয়া আশ্রয় দিয়েছে সেটা উল্লেখ করা।’
ভাষণে অপ্রয়োজনীয় কিছু বিষয় বাদ দেওয়া যেত বলে সমালোচনাও করেছেন পিনাকী ভট্টাচার্য তার পোস্টে। যুক্ত করে দিয়েছেন ‘যা বাদ দেওয়া যেত’ শিরনামে দুটি পয়েন্ট।
জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে ড. ইউনূসের ভাষণ নিয়ে আলোচনাজাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে ড. ইউনূসের ভাষণ নিয়ে আলোচনা
‘যা বাদ দেওয়া যেত’
১। সামাজিক ব্যবসার কথা, থ্রি জিরোর কথা, ক্ষুদ্র ঋণের কথা। এসব এখনো আমাদের রাষ্ট্রের প্রায়োরিটি না। এগুলো ওনার এজেন্ডা। আমরা সেগুলোকে সাপোর্ট করি কিন্তু ওই প্লাটফর্মে শুধু রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো তোলা উচিৎ।
২। ফিলিস্তিনের টু স্টেইট সলিউশন না বলে শুধু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার কথা বললে বেটার হতো। আমার ঠিক জানা নেই টু স্টেইট সলিউশন আমরা অফিসিয়ালি গ্রহণ করেছি কিনা। কিন্তু ফিলিস্তিনের লড়াইয়ের বিগেস্ট স্টেইক হোল্ডার কিন্তু টু স্টেইট সলিউশন মানে না। ইরান মানে না। তাই এই বিষয়টায় স্ট্রেইট অবস্থান নেওয়াটা এভয়েড করা যেতে পারতো।’
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘প্রফেসর ইউনুসকে আরও বেশি প্রাকটিসের টাইম দিতে হবে। উনি এখনো টেলিপ্রম্পটার দেখে পড়তে অভ্যস্ততা অর্জন করেন নাই। আটকে আটকে যাচ্ছিলেন। ওনার স্পিচ বিশ মিনিটে যেন শেষ হয় তেমন কম্প্যাক্ট করতে হবে।’
নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১১টা ২৪ মিনিটে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে ভাষণ শুরু করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রায় ৩৮ মিনিট দীর্ঘ এ ভাষণে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ‘নতুন বাংলাদেশের’ অভ্যুদয় ঘটেছে, তার সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতিসংঘ অধিবেশনে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার পূর্ণাঙ্গ ভাষণজাতিসংঘ অধিবেশনে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার পূর্ণাঙ্গ ভাষণ
এছাড়াও এ সময় ফিলিস্তিনের বাস্তবতা শুধু মুসলমানদের নয়, মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেন, ‘বিশ্ববাসীর উদ্বেগ ও নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। ফিলিস্তিনের বিদ্যমান বাস্তবতা কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্যই উদ্বেগজনক নয়; বরং সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের। একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ফিলিস্তিনির জীবন অমূল্য। ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়বদ্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা, বিশেষত নারী ও শিশুদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখছে, তা থেকে নিস্তারের জন্য বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি আনতে পারবে। তাই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবাইকে এর বাস্তবায়নের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।’
ইত্তেফাক