কাশ্মীরে নেই ঈদের আনন্দ, ঘরে ঘরে হাহাকার
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে রাজ্যটিকে কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে নিয়ে আসার পর সেখানে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। হাজারো সেনা, চেকপয়েন্ট, ১৪৪ ধারা এবং কারফিউয়ের মাঝে স্বাভাবিকভাবেই বিনষ্ট হয়েছে ঈদ-উল-আযহা’র উচ্ছ্বাস।
শনিবারও রাস্তায় হাজারো সেনাকে টহল দিতে দেখা গেছে। কাশ্মীরে চলছে পণ্য সংকট। জমে ওঠেনি পশু কোরবানির হাট। জওহর আহমেদ গানাই বলেন, শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পর রাস্তায় দুটো মেষ বিক্রি করতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু কোন ক্রেতা পান নি। তিনি বলেন, ‘ভারত কাশ্মীরিদের সঙ্গে অন্যায় করেছে। এটি কাশ্মীরিদের দেখা সবচেয়ে জঘন্য ইদ।’
ভারত সরকার ঈদ উপলক্ষ্যে কারফিউ শিথিল, ফোন ও ইন্টারনেট সেবা আংশিক চালু করার ঘোষণা দিলেও শ্রীনগরের অধিবাসীরা সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বাসিন্দা জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘তারা ফোন ও ইন্টারনেট সেবা কিছুটা চালু করেছে। কিন্তু সেটা সাধারণের জন্য নয়। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য। যদি নিষেধাজ্ঞা শিথিলই করা হতো কেন মানুষকে যাতায়াতের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না?’ তিনি আরো বলেন, গত ৬ দিন ধরেই শ্রীনগরের মার্কেট বন্ধ রয়েছে। দুধ, ঔষধ ও শিশুখাদ্যের মতো ফুরিয়ে যাওয়া প্রয়োজনীয় পণ্য দিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। যদি এই অচলাবস্থা চলতে থাকে কাশ্মীর সমাধিস্থলে পরিণত হবে। আরেকজন বাসিন্দা বলেন, ‘কাশ্মীরের পেট্রল পাম্পগুলো পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বেশিরভাগ স্থানেই এটিএম কাজ করছে না। ব্যাংকের বুথগুলো টাকা শূন্য। প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য নেই। ঈদের জন্য-তো অন্তত কিছু খাবার চাই।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি যুদ্ধের মতো। আমরা অমানবিক সময় পার করছি। কাশ্মীরের হোটেল মালিক বিলাল আহমেদ বলেন, ‘কারাগারেও যোগাযোগের অনুমতি থাকে। চোখের জল ফেলে তিনি বলেন, মুম্বাইতে পড়াশোনার জন্য থাকা মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি।’ তিনি জানান, কাশ্মীরিরা এখনো অনিশ্চিত তাদের ঠিকভাবে ঈদ পালন করতে দেয়া হবে কিনা।
তবে থমথমে পরিস্থিতি সত্ত্বেও শত শত কাশ্মীরি দিল্লী থেকে শ্রীনগর যাওয়ার ফ্লাইটের অপেক্ষায় আছেন। তবে শ্রীনগর বিমানবন্দরে সংশয় চলছে। বিমানবন্দর সড়কে মোতায়েন করা হয়েছে প্যারা-মিলিটারি। কাশ্মীরের রাস্তায় গণমাধ্যমকর্মীদেরও কারফিউ পাস দেয়া হয় নি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবী করছে, অধিবাসীরা যাতে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন সে জন্য ৩০০ টেলিফোন বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কাশ্মীরের বেশিরভাগ অধিবাসীরা জানেন না এই টেলিফোন বুথগুলো আদতে কোথায় রয়েছে।