সোনালি যুগের মিষ্টি হাসির অভিনেত্রী
স্মৃতির ফ্রেম থেকে
নবাব সিরাজ উদ-দ্দৌলা চলচ্চিত্রের লুৎফা’র কথা মনে আছে? যার ভুবনভোলানো হাসি আজও দর্শকের স্মৃতির মনিকোঠায় উঁকি দেয়। বলছিলাম, ঢাকাই চলচ্চিত্রে ষাটের দশকের কিংবদন্তি নায়িকা রোজী আফসারীর কথা। কখনো নায়িকা, কখনো বড় ভাবী, মা কিংবা বিধবা চরিত্রে প্রাণবন্ত অভিনয়ে মুগ্ধ করেছেন এদেশের সিনেপ্রেমীদের।
পাশাপাশি মহীয়সী নারী চরিত্র, বাদশাহ মহলের নির্বাসিত বেগম কিংবা পরম শ্রদ্ধেয় বড় বোনের চরিত্রেও তাকে আজও মনে রেখেছে দর্শকরা। বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের কথা মনে করলেই যার প্রিয় মুখটি চোখের সামনে ভেসে উঠে তিনি রোজী আফসারী। প্রকৃত নাম শামীমা আক্তার রোজী হলেও ১৯৮১ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক মালেক আফসারীকে বিয়ে করে স্বামীর নামের শেষাংশ নিজের নামের সাথে জুড়ে নেন।
সেই থেকে তার নাম হয়ে ওঠে রোজী আফসারী। তিনি ১৯৬২ সালে অভিনয়জীবন শুরু করেন এবং ২০০৫ সালে তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘পরম প্রিয়’ মুক্তি পায়। শামীমা আক্তার রোজীর জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের শমসেরাবাদে। বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণালি যুগের অভিনেত্রী রোজী ১৯৬২ সালে আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘জোয়ার এলো’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন।
তবে তিনি জনপ্রিয়তা পান নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ ছবিতে অভিনয় করে। তখনকার অন্তত ১০টি সুপারহিট সিনেমার নায়িকা ছিলেন তিনি। এরপর প্রায় ৪ দশক ধরে রোজী প্রায় ৩৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে পাকিস্তানের ‘জাগো হুয়া সাবেরা’, ‘পুনম কি রাত’সহ ২৫টি উর্দু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তার অভিনীত সেরা চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সূর্য গ্রহণ’, ‘সূর্য সংগ্রাম’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এছাড়া অন্যান্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘এতটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘প্রতিকার’ ইত্যাদি।
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ প্রায় ৫০টি পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৭ সালের ৯ মার্চ মাত্র ৫৭ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই অভিনেত্রী। তিনি কায়ার মধ্যে না থাকলেও মায়ার মধ্যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাকাশে এক অনন্য উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে আছেন।
ইত্তেফাক