ভারত পানি নিয়ে গেলে কি ক্ষতি হবে ফেনী নদীর? জানালেন অধ্যাপক জামশেদ আলম
মিরসরাই পানিসম্পদ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক জামশেদ আলম বলেন, গত এক যুগ ধরে ফেনী নদী থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে পানি তুলে নিচ্ছে ভারত। এখন আবার ভারতকে ফেনী নদীর পানি দিতে চুক্তি হয়েছে। নদী তো নদী থাকবে না ধু-ধু বালুচর হয়ে যাবে। পানি চুক্তির এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী বলে জানান তিনি। তিনি অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিলের জোর দাবি করেন।
চেঞ্জ টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক জামশেদ আলম।
তিনি আরো বলেন, খাগড়াছড়ির ১৭০০ একর অমীমাংসিত বাংলাদেশের যে ভূমির ওপর দিয়ে এ নদী প্রবাহিত, তা ভারতের বলেই চালিয়ে দিতে চেষ্টা করেন অনেকে। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতও নিজেদের উত্তর-পূর্ব অংশের বেশ ক’টি রাজ্যের পানির অভাব মেটাতে দীর্ঘ বছর ধরে নানা কৌশলে ফেনী নদীকে আন্তর্জাতক নদী প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
অধ্যাপক জামশেদ আলম জানান, পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হলে শুষ্ক মওসুমে নদী-তীরবর্তী চট্টগ্রামের মিরসরাই, খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা, ফেনীর ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, সোনাগাজী, মুহুরী সেচ প্রকল্প, ফুলগাজী, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের দক্ষিণাংশ এবং নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরের কিছু অংশের বিভিন্ন সেচ প্রকল্পে পানির জোগান অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এতে করে লাখ লাখ হেক্টর জমি চাষাবাদের অনাবাদি হয়ে পড়বে।
এই বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীর মতে, পানি প্রত্যাহারের ফলে অকার্যকর হয়ে পড়বে ১৯৮৪ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের হাত ধরে তৎকালীন ১৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ‘মুহুরী’। যার আওতায় এ অঞ্চলের প্রয় ১৪ থেকে ১৫টি উপজেলার ৮-৯ লাখ হেক্টর জমিতে লোনামুক্ত পানির সরবরাহ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় যেখানে ফেনী, মুহুরী ও কালিদাস এ তিনটি নদীর পানি দিয়ে ৮-৯ লাখ হেক্টর জমির সেচকাজ করার কথা, সেখানে এখনই শুকনো মওসুমে পানির অভাবে ২৩ হাজার হেক্টর জমিতেও সেচ দেয়া সম্ভব হয় না।
মিরসরাই পানিসম্পদ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক জামশেদ আলম আরো বলেন, মুহুরী সেচ প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ পানির মূল উৎস ‘ফেনী নদী’। ফেনী থেকে ২৫ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-ফেনী জেলার সীমানায় মুহুরী সেচ প্রকল্পটির অবস্থান। এখানে গড়ে ওঠা দিগন্ত বিস্তৃত চিংড়ি ঘেরগুলো ধ্বংস হবে। এ ছাড়া মুহুরী প্রকল্পের নয়নাভিরাম পর্যটন সম্ভাবনা হারিয়ে যাবে নিমিষেই। হুমকির মুখে পড়বে কয়েক লাখ হেক্টর জমির গাছপালা। ফেনী নদী, মুহুরী ও কালিদাশ পাহাড়িয়া নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মৎস্য খামার বন্ধ হয়ে যাবে।