নিহত রহমতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান।
গত ৫ জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময় গাজীপুরের মাওনায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন গার্মেন্টসকর্মী রহমত আলী। বগুড়ার সারিয়াকান্দির দুর্গম চর জামথলের দিনমজুর মুনজু মিয়ার ছেলে রহমত সংসারের অভাব মোচনে পড়াশোনা বাদ দিয়ে গার্মেন্টসের কাজ বেছে নিয়েছিলেন। নিহত হওয়ার পর মরদেহ এনে দাফন করা হয় সেই চরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে।
অভাবের সংসারের উপার্জনক্ষম সেই সন্তান হারিয়ে বাবা-মায়ের দিন কাটছিল কান্নাকাটির মধ্যদিয়ে। তবে দুর্গম সেই চর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে যায়নি কারও কানে। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকালে ‘পড়াশোনা ছেড়ে অভাব মোচনে গার্মেন্টসে চাকরিতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারান রহমত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয় চ্যানেল 24 অনলাইনে।
সংবাদটি দৃষ্টিগোচর হয় সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসনের। সবশেষ মঙ্গলবার দুপুরে রহমতের পরিবারকে উপজেলায় ডেকে নিয়ে ১০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুর রহমান।
সারিয়াকান্দির দুর্গম চরাঞ্চল কাজলা জামথল গ্রামে রহমত ৮ম শ্রেণি পাশ করার পর সংসারের অভাব অনটনের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সারাদিন পরিশ্রম করে যে সামান্য বেতন পেতেন, তা নিজের ব্যয় নির্বাহের পর সবটুকু বাড়িতে পাঠাতেন। তার টাকায় এবং বাবার দিনমজুরিতে চলতো তাদের সংসার। নিজে পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও তার ছোট ভাই আল আমিনকে ঢাকায় নিয়ে পড়াশোনা করাতেন। রহমতের ছোট ভাই আল আমিন গ্রামেই এইচএসসি পাশ করে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন।
আল আমিনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তার বড় ভাই রহমত আলী গত ৫ আগস্ট দুপুরে বাসা থেকে বের হন। সেদিন রাত ৮টার পর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করার পর রাত ১০টার দিকে গাজীপুর শ্রীপুর মাওনা চৌরাস্তা প্রশিকা মোড় এলাকার আল হেরা মেডিক্যাল সেন্টারে রহমতের লাশ শনাক্ত করা হয়। সেখানে দেখা যায়, হাসপাতালের স্ট্রেচারে পরে আছে রহমতের নিথর মরদেহ। তখন আল আমিন বুঝতে পারেন- মাওনা এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালীন রহমত নিহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে পুলিশের গুলি রহমতের বুকের ডানপার্শ্ব ভেদ করেছে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরদিন অ্যাম্বুলেন্সযোগে রহমতকে তার গ্রামের বাড়ি জামথলে নিয়ে আসা হয়। তবে নিজের জায়গাজমি না থাকায় রহমতের মরদেহ জামথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেই দাফন করা হয়। তার বড় ভাই আব্দুস সোবহান একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর তার ছোট বোন বন্যার বিয়ে হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, আপাতত রহমতের পরিবারকে সামান্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরে তাদের জন্য ভালোকিছু সহায়তা প্রদান করা যাবে।