‘নিঃশ্বাস আল্লাহ দিছে, না দিলে তো মইরাই যাইতাম’
হাসপাতালের শয্যায় বসে দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে বলছিলেন বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন বেপারী।
সুমন বেপারী বলেন, কিসের মধ্যে ছিলাম আল্লাহ জানেন, তবে ভেতরে এক জায়গায় খাড়ায় ছিলাম রড ধইরা। দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে আসে, সে সময় তিনি ইঞ্জিনরুমের সাইডে বসা ছিলেন বলেও জানান। লঞ্চ যখন ডোবে, তখন আমি ঘুমোচ্ছিলাম। লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় ঘুম ভাঙে। শুধু বুঝতে পারলাম- লঞ্চটি ধাক্কা খাইল। আর কিছু মনে নাই।
আজ মঙ্গলবার (৩০ জুন) সকালে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে কথা হয় তার সঙ্গে। এ সময় সুমন বেপারী জানান, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামে তার বাড়ি। তিনি একজন ফল ব্যবসায়ী। সদরঘাটের বাদামতলী ফলের আড়তেই ব্যবসা। ব্যবসার কাজেই ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে সুমন বলেন, আমার কাছে মনে হইলো ১০ মিনিট ছিলাম, আল্লাহ যে ক্যামনে ১২-১৩ ঘণ্টা পার কইরা দিলো বলতে পারি না। আমি ভেতরে কিসের মধ্যে ছিলাম, কিচ্ছু বুঝতে পারি নাই, তবে পানির তলে ছিলাম এইটুক জানি।
সেখান থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহ বাইর কইরা নিয়ে আসছে। বের হওয়ার সময় কিচ্ছু বুঝি নাই। বের হওয়ার পর আমারে উদ্ধার কইরা নিয়া আসছে। পানির মধ্যে যখন ছিলাম, তখন সাঁতার কাটার ফোম দেখছিলাম চোখের সামনে, হাতরায় নিতে পারতেছিলাম না, পরে লোহার রড ধরে বসে ছিলাম।
নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিলে কি না জানতে চাইলে সুমন বেপারী বলেন, ‘নিঃশ্বাস আল্লাহ দিছে। না দিলে তো মইরাই যাইতাম। ওপরে যখন উঠি, তখন কিছুই বুঝতে পারি নাই, ক্যামনে উঠলাম, কীভাবে উঠলাম।’
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় ছোট আকারের লঞ্চ মর্নিং বার্ড। মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে সদরঘাটে এসে নোঙর করতে যাচ্ছিল মর্নিং বার্ড। ময়ূর-২ লঞ্চটিও চাঁদপুর থেকে সদরঘাটে এসে যাত্রী নামিয়ে ভিন্ন স্থানে নোঙর করতে যাচ্ছিল।
ডুবে যাওয়া লঞ্চটি থেকে এ পর্যন্ত ৩২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া লঞ্চডুবির প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে জীবিত উদ্ধার করা হয় সুমন ব্যাপারীকে। নদীতে ভেসে ওঠার পর কোস্টগার্ডের কর্মীরা তাকে তুলে নেন। উদ্ধার করার পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে। তাঁকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিও।