ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই ছাত্ররাজনীতি, আছে সামাজিক সংগঠন
দেশে যখন বিষাক্ত ছাত্র রাজনীতির কবলে পড়ে আবরার ফাহাদের মত মেধাবী শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠন ‘আঞ্জুমানে ইসলামি দানেশজুয়ান’ এর উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা কিভাবে নিজেকে গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত করতে পারে আর এ গবেষণাগুলো কিভাবে বিশ্বের মানুষের উপকারে কাছে লাগানো যায় তা শেখানো হচ্ছে।
আরেকটি সংগঠন হচ্ছে ‘জিহাদে সালামাত’ যাদের কাজই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে শহরের দূরবর্তী এলাকার মানুষদের মাঝে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা দেবার আয়োজন করা। অন্যদিকে ‘বাসিজ’ নামের আরেকটি সংগঠন আছে, যাদের কাজের মাঝে রয়েছে একজন শিক্ষার্থীকে কিভাবে একজন ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাঁর প্রচেষ্টা চালানো। নিয়মিতভাবে তাঁরা আয়োজন করে থাকে ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং শিক্ষা সফরের।
এবার আমাদের ডরমেটরি নিয়ে কিছু বলা যাক, এখানে সিনিয়র আর জুনিয়রদের মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। চলার পথে দেখা হলে সিনিয়ররা জুনিয়রদের সালাম দেই, এটাই স্বাভাবিক কিছু। কিছু সিনিয়ররা জুনিয়রদের পড়াশোনা নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন কিছু পাবার আশায় না, শুধু আনন্দিত হবে এমন ইচ্ছায়। অনেকে নিজদের মত করে রাত জেগে লাইব্রেরীতে পড়ে। কেউবা টিভি রুমে বিভিন্ন আয়োজন দেখতে ব্যস্ত থাকে।
ডরমেটরির শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান করার জন্য রয়েছে, ‘শুরায়ে সেনফি’ নামের একটি সংগঠন।
প্রতিবছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হয়ে আছে কিছু শিক্ষার্থী। এসব দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়ে তা সমাধানে এগিয়ে আসেন। ডরমেটরিতে সবধরণের মাদক নিষিদ্ধ। কেউ ধূমপান করতে চাইলে তাকে যেতে হয় রুমের বাইরে। ডরমেটরিতে কেউ আসতে চাইলে গেটে অবশ্যই তাকে স্টুডেন্ট কার্ড জমা দিতে হয়। আর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সমাপ্ত হলে ডরমেটরিতে থাকার কোন সুযোগ নেই। এসব অভিজ্ঞতার মাঝেই প্রবাসে শিক্ষাজীবনের ছয় বছরের পার হচ্ছে।
আশা করি, মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ যাবত সকল হত্যার বিচার হবে। সবশেষে এটাই বলবো দেশের বর্তমান এই বিষাক্ত ছাত্র রাজনীতি থেকে মুক্তি পেতে এখনই সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।
লেখক: কামরুজ্জামান নাবিল. ছাত্র, ডক্টর অব মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান