fbpx
হোম তারুণ্য ইরানের চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে ঝলমলে অভিজ্ঞতা
ইরানের চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে ঝলমলে অভিজ্ঞতা

ইরানের চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে ঝলমলে অভিজ্ঞতা

0

দিন যত যাচ্ছে ইরানের মেডিকেল সায়েন্স গবেষণায় অভূতপূর্ব সব অবিস্কার যুক্ত হচ্ছে। বিশ্ব যখন এগিয়ে চলছে সেই মুহূর্তে ইরানের আবিস্কারগুলো অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ন মনে নাও হতে পারে। কিন্তু পশ্চিমাদের এত অবরোধের মাঝেও এমন সব আবিস্কার শুধু মুসলিম বিশ্বকেই নয় গোটা বিশ্বকে চমকে দিচ্ছে ।

কিন্তু এমন সব আবিস্কার কিভাবে সম্ভব হচ্ছে এ নিয়ে ইরানের ইস্ফাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষক বলছিলেন, একজন শিক্ষার্থী শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থী নয়, একজন গবেষকও হবেন। আর এমন নতুন নতুন গবেষকদের গবেষণার ফলই হচ্ছে অভূতপূর্ব সব আবিস্কার।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বলি, আমার ডক্টর অফ মেডিসিন (এমডি) ডিগ্রীর চার বছর পেরিয়েছে, এখনো বাকি তিন বছর। সাত বছরের এই কোর্সে গবেষণা রিলেটেড একাডেমিকভাবে আমাদের ৬ ক্রেডিট পাশ করতে হয়। তিন বছর বাকি থাকতেই সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রপোজাল লেখা নিয়ে নক দেওয়া শুরু হয়েছে।

সেই সুত্র ধরে, আমার প্রিয় ডিপার্টমেন্ট পেডিয়েট্রিক‬‏ ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন প্রফেসরকে রিসার্চ নিয়ে কাজ করতে চাই বলে মেইল করেছিলাম। কিছুটা বিরতিতে তাঁদের কয়েকজনের কাছ থেকে ইমেইল রিপ্লাই পেলাম। তাঁদের মাঝ থেকে একজন প্রফেসরকে নির্বাচন করে সময় নিয়ে ওনার সাথে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করলাম এবং আমার প্রপোজালের টাইটেল ঠিক করলাম। এই প্রপোজালের টাইটেলের উপরেই আমাকে সাত বছর শেষে ডিফেন্স করতে হবে, তাই এমন বিষয় নির্ধারণ করা উচিত, যে ফিল্ডে নিজের ভাললাগা বা পছন্দ কাজ করে।

ইরানের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণা কেন্দ্রিক একটি কমিটি আছে যাদের কাজ হচ্ছে গবেষণা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রবন্ধ লেখা নিয়ে ওয়ার্কসপ করা। শিক্ষার্থীদের গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ করা। আমাদের প্রপোজালের টাইটেল লেখা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত এই কমিটিই শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সর্বাত্মক সাহায্য করে থাকে।

এছাড়াও ইরানের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার ক্ষেত্রে শিক্ষকগণ প্রায় ক্লাসেই শিক্ষার্থীদের গবেষণা নিয়ে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এমন উৎসাহ প্রদান একজন শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থী হিসেবেই না একজন গবেষক হিসেবেও গড়ে তুলতে সাহায্য করে চলছে।
বলাবাহুল্য যে, ইরানের বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও গবেষণার জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা একটা অর্থনৈতিক বাজেট থাকে যা প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গবেষণার ক্ষেত্রে সরবরাহ করে থাকে।

মেডিকেল জার্নাল ওয়েবসাইট পাবমেড এর একটি আর্টিকেলের সুত্র মতে, ইরান ১৯৬৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেডিকেল সায়েন্স সব বিভাগে ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ২৯০ টি প্রকাশনা বের করেছে এর মাঝে শুধুমাত্র ক্লিনিকাল, বায়োমেডিকেল এবং জনস্বাস্থ্য নিয়ে ৭২ হজার ৬৮৬টি প্রকাশনা বের করেছে। এর মাঝে সবচেয়ে বেশী গবেষণা হয়েছে পেডিয়েট্রিক, ডেন্টাল বিভাগে এর পরেই রয়েছে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং ফার্মেসি বিভাগ। এছাড়াও গবেষণায় উল্ল্যেখযোগ্য সাফল্যগুলোর মাঝে রয়েছে:

১. প্লাস্টিক সার্জারির ক্ষেত্রে অন্যতম গবেষক ইরানের।
২. তেহরানের শহীদ বেহেশতি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় প্লাস্টিক সার্জারির ক্ষেত্রে শক্তিশালী আঠালো টিস্যু তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
৩. আগুনে পুড়ে যাওয়া শরীরের ক্ষতস্থান লেজারের মাধ্যমে কৃত্রিম চামড়া উৎপাদনের মাধ্যমে তা পূর্ণ হয়ে যাওয়ার মতো পদ্ধতির আবিষ্কারকও ইরানের ডাক্তারগণ।
৪. প্রায় ১০ বছর গবেষণা চালিয়ে কৃত্রিম শ্বাসনালী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন ইরানের মেডিকেল সায়েন্সের গবেষকগণ।
৫. Three-Dimensional Medical Images নামক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন ইরানি চিকিৎসকগণ।
৬.কার্ডিও-ওনকোলজি গবেষণায় ইরান এগিয়েছে, তারই সূত্র ধরে কিছুদিন আগে এশিয়ার প্রথম কার্ডিও-অনকোলজি গবেষণা কেন্দ্রটি ইরানের তেহরানে উদ্বোধন করা হয়েছে।
৭.ভ্যাকসিন উৎপাদনে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে ইরান। স্টেম সেল গবেষণার ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান প্রথমসারির ১০টি দেশের মাঝে।

এমন সব আবিস্কারে আন্তর্জাতিক প্রবন্ধ ডাটাবেজ গুগল স্কলার, স্কোপাস এবং ওয়েব অফ সায়েন্স কোর কালেকশান ইত্যাদি সবখানেই ইরানি গবেষকদের উল্ল্যেখযোগ্য একটি অবস্থান তৈরী হয়েছে। যা মেডিকেল সায়েন্স গবেষণাকে উজ্জ্বল করেছে বা করছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

লেখকঃ কামরুজ্জামান নাবিল
শিক্ষার্থী, ডক্টর অফ মেডিসিন (এমডি) ইস্ফাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
tags:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *