fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা মাদ্রাসায় যৌনতার অভিযোগ !
মাদ্রাসায় যৌনতার অভিযোগ !

মাদ্রাসায় যৌনতার অভিযোগ !

0
বি.দ্র. সাকের আহমেদ নামে একজন দর্শক মাদ্রাসায় যৌনতা বিষয়ক নিজের কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরে একটি লেখা পাঠিয়েছেন চেঞ্জ টিভিতে। লেখাটি আমরা উপস্থাপন করছি। লেখা সংক্রান্ত সকল দায় পুরোপুরি লেখকের। নিচে তার লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো…
মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেক রকম আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে, থাকবে। তবে আমি সুনির্দিষ্টভাবে কওমি মাদ্রাসার কথা বলতে চাচ্ছি। কারণ আমার অল্পবিস্তর যে অভিজ্ঞতা, তা কওমি মাদ্রাসা নিয়েই।
আরেকটু আগ বাড়িয়ে বলতে গেলে কওমি মাদ্রাসাগুলোয় যে ছাত্ররা ধর্ষণের শিকার  হয়, সে বিষয়ে আমার কিছু কথা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরাই এ লেখার মূল উদ্দেশ্য।
অনেকে হয়তো মনে করছেন এ বিষয়ে আমার কলম ধরা ঠিক হয় নি। তাঁদের উদ্দেশ্যে আমি দু’তিনটে কথা বলতে চাই।
১. গত কয়েক মাস ধরে আমি ভালো রকমের মানসিক বিকারগ্রস্ত। অবসাদের আধিক্যে একাধিকবার হতাশ হয়েছি জীবনের প্রতি, নিরাশ হয়েছি অন্য দশটা মানুষের মতো বেঁচে থাকার প্রতি। একাধিকবার মরে যেতে মন চাইছিলো। সে মানসিক চাপ কখনো বাড়ছে আবার কখনো কমছে। থামতে চাইছেই না। পড়ালেখায়ও মন বসছে না অনেক মাস হয়ে গেলো। তাই চিন্তা করলাম বিষয়টা লিখলে, সবাইকে জানালে হয়তো একটু হালকা হতে পারি।
২. অনেকেই, বিশেষত অনেক মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্ররা এ নির্যাতনের কথা দিবালোকের ন্যায় জানা স্বত্ত্বেও কী যেন অজ্ঞাত কারনে তারা এসবকে ‘ইহুদি-খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র’ ও ‘মিডিয়ার চক্রান্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। এমনকি সেদিন ইউটিউবে দেখলাম সৈয়দ ফয়জুল করিমও এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মাদ্রাসায় বলাৎকারে’র প্রশ্নে সাংবাদিকদের এসবকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে উত্তর দিলেন। আমি বলতে চাই, শুধু একজন ফয়জুল করিম নন, এমন হাজার হাজার ফয়জুল করিম এখনো আছেন। তারা মাদ্রাসায় শিশু-নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে আখ্যায়িত করতে চান। এক দু’টো ঘটনা হলে এসবকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যেতো, কিন্তু যে পরিমাণে এসব দূর্ঘটনা ঘটছে। তাতে আমি কিছুতেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে পারছি না। অক্ষমতা প্রকাশ করছি।
৩. আমি জানতে পেরেছি, দু’হাজার উনিশের জুলাইয়ে ফেসবুকে নিজেসহ অন্যান্য মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যৌন-নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মীর হুজায়ফা মামদূহ নেহাল। নেহাল ভাইয়ের এ পোস্টে একজন মাদ্রাসায় আসলে এগুলো ঘটে না, ঘটলে ভুক্তভোগীদের দিক থেকে প্রতিবাদ হতো বলে মন্তব্য করেন। এ ধরনের মন্তব্যগুলো আমাকে এ জবানবন্দি লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কারন, আমিও একজন ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগীরা কথা বলে না বলে তারা এ বিষয়টাকে ধামাচাপা দেয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করছে অথবা মিথ্যে আখ্যায়িত করতে চাচ্ছে। সুতরাং আমি মনে করি, ভুক্তভোগীদেরই এবার মুখ খুলতে হবে। কারন, মাদ্রাসাও তাদের কথা বলবে না, সমাজও তাদের কথা বলবে না। তাদের কথা তাদেরকেই বলতে হবে।
৪. এ বিষয়ে কলম ধরার অন্যতম কারন হিসেবে আমি বলতে চাই, অনেককে বিষয়টি বলতে চেয়েও বলতে পারিনি। বিশেষত মা-বাবা ও বড় ভাই-বোনদের কথা বলছি। কারন, তাদেরকে বলতে চাইলে লজ্জা-ভয়-সাহস প্রভৃতির কারণে কখনো ভালোভাবে বলা সম্ভবপর হয়ে ওঠে নি। পরন্তু আমার ছোটো ভাইকেও এক হাফিজি মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছে এবং আমাকেও মাদ্রাসায় যাওয়ার প্রতি চাপ প্রদান করা হচ্ছে।
তা ছাড়াও সামগ্রিকভাবে সবধরনের মানুষকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করা ও বোঝানো আমার এ লেখার অন্যতম উদ্দেশ্য। পাশাপাশি সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক আমাকে এ বিষয়ে লিখতেই হচ্ছে। এসব ছাড়া আমি আর কোনো কারণ দর্শাতে চাচ্ছি না। তবে, সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে আমি আমার অক্ষমতাকে দাঁড় করাচ্ছি।
-আমি প্রায় নয়-দশ বছর কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছি। এ সময়ে আমি টাঙ্গাইলের তিনটা মাদ্রাসা ও ঢাকার একটি মাদ্রাসায় পড়েছি। মোলেস্টেশনের শিকার হয়েছি টাঙ্গাইলে। দেলদুয়ারের আলা-জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুল উলুম মুশুরিয়া মাদ্রাসায়। এ মাদ্রাসার নাম উল্লেখ করে আমি মাদ্রাসার দুর্নাম করতে চাই নি। মানুষদের জানাতে চেয়েছি। তাছাড়াও প্রায়শই যেহেতু মাদ্রাসসমূহে এসব ঘটছে, সে কারণে একটি মাদ্রাসার নাম উল্লেখ করা বা না করা আমার কাছে নির্রথকই মনে হয়।
আমরা জানি, মাদ্রাসার ছাত্ররা কতো রকম নির্যাতনের শিকার হয়। সত্যি কথা বলতে, শিক্ষকদের উন্মাদের মতো বেত্রাঘাত, শিক্ষক অথবা ছাত্র কর্তৃক শিশু-ধর্ষণসহ সমূহ-নির্যাতন বন্ধের সম্ভাবনা না থাকলে আমি এসব মাদ্রাসা চলতে দেওয়ার অনেকটাই বিপক্ষে। খুব অবাস্তব মনে হলেও একই কথা আমাদের দেশের মূলধারার বিদ্যালয়গুলোর বেলায়ও খানিকটা সত্য। তবে বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা মাদ্রাসাগুলোর মতো এখনো অতোটা নিম্নস্তরে পৌঁছে নি।
প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আমাদের পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ আমি। আমার বাবা একজন আলিম। মামাদের সবাইও আলিম। সে থেকেই আমাকেও অন্যান্য ভাইদের মতো ছোটোকালে বাবা মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। আমি সম্পূর্ণ কোরআন মজিদের হাফিজ হতে প্রায় চার বছর বা সাড়ে চার বছরের মতো সময় মাদ্রাসায় অতিবাহিত করি। এ সময়টাতে আমি প্রায় চার-পাঁচবার ধর্ষণের শিকার হই। দশ-এগারো বছর বয়সে যখন আমি কিছুই বুঝি না সে সময়েই আমাকে হস্তমৈথুনও শিখিয়ে দেয় মাদ্রাসার এক বড় ছাত্র। তাছাড়া শিক্ষক কর্তৃক গরুর মতো ‘বেত্রাঘাত’, বড় ছেলেদের কর্তৃক অনর্থক চড়-থাপ্পড়, নোংরা ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও ধমক ছিল আমার নিত্যদিনের সঙ্গী।
আমার জীবনের এ ঘটনাগুলো কখনোই কাউকে বলি নি। অথবা বোধ, লজ্জা ও সাহসের কারনে কখনো বলা হয়ে ওঠে নি। এমনকি আমার আম্মাকে সে ক’দিন আগে কেঁদে-কেঁদে একটু করে বলেছিলাম। এ কারণে তিনি বাবাকে বকাঝকাও করেছিলেন। বড় ভাইকেও তারপরে একদিন বলেছিলাম ম্যাসেজে। অবশ্য সে গল্প-কাহিনী এখন কাউকে বলে কোনো লাভ নেই। সময় মতো বলা হলেও কোনো লাভ হতো কিনা সে আমি জানি না। হয়তো তখন বলা হলেও মা-বাবা জানতেন। সাথে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও এ ঘটনা ভালোভাবে জানতে সক্ষম হতো। কিন্তু আমার বাবা হয়তো মাদ্রাসার সম্মান রক্ষার্থে অথবা একজন পিতা হিসেবে আপন সম্মান রক্ষার্থে একটি মামলাও করতেন না। আর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় মাদ্রাসার ‘সুনাম’ রক্ষার্থে তা গোপনই রাখতেন।
তাছাড়া আমরা মাদ্রাসায় দেখেছি, অপরাধীদের বহিষ্কৃত তো করা হয় নি, বরং উল্টো অনেকসময় ওদের কোনো বিচারই হয় নি।
বিপরীতে ছোটো-ছেলেদেরকে যারা কিছু বোঝে না এ কারণে ওদেরকে ভীতিপ্রদর্শণ করা হয়েছে এবং ওদেরকে কথিত ‘নাসিহা’ করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে অপরাধীরা চুনোপুটি থেকে রাঘব বোয়াল হতেও বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় নি। ওরা ওদের ইচ্ছেমতো ছোটদের অশ্লীল কথা বলতে দেখেছি, দেখেছি ছোট ছেলেদের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করতেও। এবং কিছু দরবেশদের দেখেছি নাসিহা না করে উল্টো ভিক্টিমদের টীকা-টিপ্পনী কাটতে, হাবিজাবি বলে ক্ষেপাতে। কিন্তু আমি ওদের দোষারোপ করতে চাই না, আমি দোষারোপ করতে চাই ওদের পরিবেশের, ওদের হুজুরদের এবং ওদের হুজুরদের কথিত হিকমাহ’র।
ফলাফল দাঁড়ালো কি, আমার শরীরের অবস্থাও এখন খুব ভালো না। মানসিক অবস্থার কথা তো বললামই। খেলাধূলোও ভাল্লাগে না। এক ধরনের একঘেঁয়েমি চেপে বসেছে মাথায়। কিচ্ছু ভাল্লাগে না।
-এসব নিয়ে লেখলে হয়তো আরো অনেক কিছুই লেখা যেতো, তবে লেখাটা আরো দীর্ঘ হয়ে যেতো, যে কারণে পাঠকদের মনোযোগ হারানোর আশঙ্কা থাকে। তাছাড়াও স্রেফ লেখালেখির মাধ্যমেই এসবের সংশোধন সম্ভব নয়, সম্ভব হবে সর্বমুখী প্রতিবাদ ও প্রচেষ্টায়। আমি চাই সংশোধন হোক। সবাই এগিয়ে আসুক।
লেখক: সাকের আহমেদ।
Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *